পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/৮০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

বৌরা মিলে গড়া ও বামুনেরা ভেজে দিলে এ-ঘর ও-ঘরে বণ্টন করা।

 ১১ই মাঘের উৎসব ছিল উপাসনা ও সঙ্গীত-প্রধান উৎসব। সেকালের ১১ই মাঘের বেদীতে উপবিষ্ট হতেন তিনজন আচার্য-তার মধ্যে কখনো কখনো দ্বিজেন্দ্রনাথ বা সত্যেন্দ্রনাথও একজন আচার্য হতেনতাঁদের সমবেত কণ্ঠে বিশুদ্ধ সংস্কৃত উচ্চারণের বেদমন্ত্রধনিতে কর্ণ [তৃপ্ত হ'ত। ভক্ত দর্শকে। অর্ধেক উঠান ভরে যেত। বাকী অর্ধেক আগন্তুক আসত সঙ্গীতের মোহে। এমন বেদধবনিও বাঙলায় কেউ কোথাও শোনেনি ইতিপূর্বে, আর এমন গুরুগম্ভীর অথচ সুমধুর সঙ্গীত-রসে প্লাবিত হয়নি বাঙলার অঙ্গন। নদীয়ার কীর্তন এক জিনিস—এ আর এক জিনিস। বৈষ্ণব ভক্তদের কীর্তন ভাবেতে মজে দশাপ্রাপ্ত হয়ে ধুলায় অবলুণ্ঠন প্রধান, আর ১১ই মাঘের সঙ্গীত ভাবেতে উড্ডীন হয়ে মর্ত হতে স্বর্গে আরোহণ প্রধান। বিশেষত রবীন্দ্রনাথ যখন তাঁর ভ্রাতাদেরসহ ১১ই মাঘের সঙ্গীতের আসরে নামলেন তখন ব্রহ্মের উপাসনায় হৃদয়ের কোণে কোণে যেখানে যত নদী খাল বিল শুকনো ছিল সব ভরে উঠল। আর “মনে কর শেষের সেদিন কি ভয়ঙ্কর” নয়, শুধু, “তুমি অগম্য অপার” ইত্যাদি বর্ণনামূলক নির্গূণ ব্রহ্মের স্তুতি নয়। এখন হল সমস্ত বাহ্য বা অন্তর-প্রকৃতিতে প্রতিভাত সগুণ ঈশ্বরের আবাহন। বৈষ্ণবদের লক্ষী বিষ্ণ, বা শাক্তদের শিব কালীর স্থলে খ্রীস্টানদের Personal God-এর অবতারণা—

“বিশ্ববীণা-রবে বিশ্বজন মোহিছে
স্থলে জলে, নতলে বনে উপবনে,
নদী নদে, গিরি গুহা পারাবারে।”
 * * * *
“আজ আনন্দ প্রেমচন্দ্রে নেহারো
হৃদি-গগন-মাঝে!
করি জীবন সফল।”
 * * * *
হল— “তোমার কথা হেথা কেহত বলে না
করে মিছে কোলাহল,
সুধা-সাগরের তীরেতে বসিয়া
পান করে শুধ, হলাহল!”
 * * * *

৬৭