পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/৯৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

করেছিল। কিন্তু এ গান তাঁদের মজলিসে গাওয়া অন্যতম একটি গান মাত্র। আমাদের যেমন সংস্কৃত গান শুনতে ভাল লাগে, কিন্তু তাতে পেট ভরে না—তাঁদেরও তেমনি। অন্যান্য বহু গান হিন্দী ও বাঙলা দুইই—তাঁদের ফরমাসে গেয়ে গেয়ে শেষ হত না। তাঁদের একটি প্রিয় গান ছিল যা প্রতিদিনই একবার করে গাওয়াতেন—সেটি আমার “নমো হিন্দুস্থান”। তার কোরাসে সবাই মিলে যোগও দিতেন।

 বদ্রুদ্দিন তায়েবজীর ছয় ভাই ও তিন-চার বোন, তাঁদের পুত্রকন্যা ও তাঁর নিজেরই দশবারটি সন্তান নিয়ে শাখাপ্রশাখায় বিস্তৃত বৃহৎ পরিবার তাঁদের। হপ্তায় একদিন করে এর বাড়ি ওর বাড়ি বড়দের একত্র ভোজনের একটি নিয়ম বেঁধেছিলেন তাঁরা যাতে পারিবারিক সংহতিটা ঠিক থাকে। তাই পালা পালা করে এ-বাড়ি ও-বাড়িতে আমারও নিমন্ত্রণ থাকত। আমি আসলে অতিথি ছিলুম হায়দরীদের, কিন্তু ‘rage’ বা আগ্রহের বস্তু হলুম সকলের—আমায় নিয়ে কাড়াকাড়ি করা ফ্যাশন হয়ে পড়ল। মিসেস হায়দরীর পিসতুত বোন জঞ্জিরা দ্বীপের নবাবের বেগম হয়েছিলেন। তাঁর নাম নাজ্‌লি বেগম ও তাঁর ছোট বোন আতিয়া বিবি। নাজ্‌লি বেগমের অনুরোধ আমিনা এড়াতে পারলেন না। কিছুদিনের জন্যে আমায় জঞ্জিরায় নিয়ে যেতে দিলেন। আমার সঙ্গে পরিচয়ের পর তায়েবজী পরিবারে সঙ্গীতচর্চা ভালরকম করে আরম্ভ হল। আতিয়া ওস্তাদ রেখে গান শিখতে লাগলেন ও ভারতের ক্লাসিকাল সঙ্গীতের পৃষ্ঠপোষকতার সূচনা করলেন। কংগ্রেস-বিখ্যাত আব্বাস তায়েবজী বদ্রুদ্দিন তায়েবজীর ভ্রাতুষ্পুত্রও বটে, জামাতাও বটে। তাঁর একটি কন্যার গান কংগ্রেসের অনেকেই শুনেছেন—অতি মৃদু মধুর কণ্ঠ তার। তার মুখে মীরাবাঈয়ের গান শুনে সকলে মুগ্ধ হন।

 পঞ্জাবেও আমি যাবার পর থেকে মেয়েদের সঙ্গীতচর্চা ভাল রকম করে হতে থাকল। মাদ্রাজ, মহীশূর ভিন্ন ভারতের আর কোন অংশে মেয়েদের সঙ্গীতজীবন একেবারে বিকশিত দেখিনি—সে সঙ্গীতের তুলনা উত্তর ভারতে নেই। “বন্দে মাতরম্‌”ও আমার গাবার পর থেকে ক্রমে ক্রমে ভারতে সর্বত্র মেয়েদের কণ্ঠে ধ্বনিত হতে লাগল। “বন্দে মাতরম্‌”এর কথায় মনে পড়ে দিল্লী থেকে একজন বৃদ্ধ বড় ইংরেজ ব্যারিস্টার একবার লাহোরে একটা মকদ্দমায় এসেছিলেন। আমাদের বাড়ি চা-য়ে এসে সেই সময় বাঙলার অফিসারদের দ্বারা স্থানে স্থানে নিষিদ্ধ গানটি শুনতে কৌতুহল প্রকাশ করেন। আমি গাইলুম—পিয়ানো সহযোগে।

৮১