পাতা:জীবন-স্মৃতি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৩৪৮).pdf/১০৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
হিমালয় যাত্রা
১০১

সনাঅন্তে একবাটি দুধ খাওয়া শেষ করিতেন তখন আমাকে পাশে লইয়া দাড়াইয়া উপনিষদের মন্ত্রপাঠদ্বারা আর-একবার উপাসনা করিতেন।

 তাহার পরে আমাকে লইয়া বেড়াইতে বাহির হইতেন। ঠাহর সঙ্গে বেড়াইতে আমি পারিব কেন? অনেক বয়স্ক লােকেরও সে সাধ্য ছিল না। আমি পথিমধ্যেই কোনাে একটা জায়গায় ভঙ্গ দিয়া পায়-চলা পথ বাহিয়া উঠিয়া আমাদের বাড়িতে গিয়া উপস্থিত হইতাম।

 পিতা ফিরিয়া আসিলে ঘণ্টাখানেক ইংরেজি পড়া চলিত। তাহার পর দশটার সময় বরফগলা ঠাণ্ডাজলে স্নান। ইহা হইতে কোনােমতেই অব্যাহতি ছিল না; তাহার আদেশের বিরুদ্ধে ঘড়ায় গরমজল নিশাইতেও ভৃত্যের। কেহ সাহস করিত না। যৌবনকালে তিনি নিজে কিরূপ দুঃসহশীতলজলে স্নান করিয়াছেন আমাকে উৎসাহ দিবার জন্য সেই গল্প করিতেন।

 দুধ খাওয়া আমার আর এক তপস্যা ছিল। আমার পিতা প্রচুর পরিমাণে দুধ খাইতেন। আমি এই পৈতৃক দুগ্ধপানশক্তির অধিকারী হইতে পারিতাম কি না নিশ্চয় বলা যায় না। কিন্তু পূর্বেই জানাইয়াছি কি কারণে আমার পানাহারের অভ্যাস সম্পূর্ণ উলটাদিকে চলিয়াছিল। তাঁহার সঙ্গে বরাবর আমাকে দুধ খাইতে হইত। ভৃত্যদের শরণাপন্ন হইলাম। তাহারা আমার প্রতি দয়া করিয়া বা নিজের প্রতি মমতাবশত বাটিতে দুধের অপেক্ষা কেনার পরিমাণ বেশি করিয়া দিত।