পাতা:জীবন-স্মৃতি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৩৪৮).pdf/১১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১১৬
জীবন-স্মৃতি

—বিশেষ কিছুই নহে কিন্তু আজ পর্যন্ত তাঁহার সেই প্রশ্নটি ভুলি নাই। অন্য ছাত্রদের কথা বলিতে পারি না কিন্তু আমি তাঁহার ভিতরকার একটি বৃহৎ মনকে দেখিতে পাইতাম— আজও তাহা স্মরণ করিলে আমি যেন নিভৃত নিস্তব্ধ দেবমন্দিরের মধ্যে প্রবেশ করিবার অধিকার পাই।

 সে-সময়ে আর-একজন প্রাচীন অধ্যাপক ছিলেন, তাঁহাকে ছাত্রের বিশেষ ভালোবাসিত। তাঁহার নাম ফাদার হেনরি। তিনি উপরের ক্লাসে পড়াইতেন, তাঁহাকে আমি ভালো করিয়া জানিতাম না। তাঁহার সম্বন্ধে একটি কথা আমার মনে আছে, সেটি উল্লেখযোগ্য। তিনি বাংলা জানিতেন। তিনি নীরদ নামক তাঁহার ক্লাসের একটি ছাত্রকে জিজ্ঞাসা করিয়াছিলেন, তোমার নামের বুৎপত্তি কী? নিজের সম্বন্ধে নীরদ চিরকাল সম্পূর্ণ নিশ্চিন্ত ছিল—কোনোদিন নামের ব্যুৎপত্তি লইয়া কিছুমাত্র উদ্বেগ অনুভব করে নাই—সুতরাং এরূপ প্রশ্নের উত্তর দিবার জন্য সে কিছুমাত্র প্রস্তুত ছিল না। কিন্তু অভিধানে এত বড়ো বড়ো অপরিচিত কথা থাকিতে নিজের নামটা সম্বন্ধে ঠকিয়া যাওয়া যেন নিজের গাড়ির তলে চাপাপড়ার মতো দুর্ঘটনা-নীরু তাই অম্লানবদনে তৎক্ষণাৎ উত্তর করিল—নী ছিল রোদ, নীরদ— অর্থাৎ যা উঠিলে রৌদ্র থাকে না, তাহাই নীরদ।