পাতা:জীবন-স্মৃতি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৩৪৮).pdf/১৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১২
জীবন-স্মৃতি

দশের কোঠা পার হইবার পূর্বে কোনােদিন কোনো কারণেই মোজা পরি নাই। শীতের দিনে একটা সাদা জামার উপরে আর-একটা সাদা জামাই যথেষ্ট ছিল। ইহাতে কোনােদিন অদৃষ্টকে দোষ দিই নাই। কেবল আমাদের বাড়ির দরজি নেয়ামত খলিফা অবহেলা করিয়া আমাদের জামায় পকেট-যােজনা অনাবশ্যক মনে করিলে দুঃখ বােধ করিতাম—কারণ,এমন বালক কোনাে অকিঞ্চনের ঘরেও জন্মগ্রহণ করে নাই পকেটে রাখিবার মতাে স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি যাহার কিছু-মাত্র নাই; বিধাতার কৃপায় শিশুর ঐশ্বর্য সম্বন্ধে ধনী ও নির্ধনের ঘরে বেশি কিছু তারতম্য দেখা যায় না। আমাদের চটিজুতা একজোড়া থাকিত, কিন্তু পা দুটা যেখানে থাকিত সেখানে নহে। প্রতিপদক্ষেপে তাহাদিগকে আগে আগে নিক্ষেপ করিয়া চলিতাম—তাহাতে যাতায়াতের সময় পদচালনা অপেক্ষা জুতাচালনা এত বাহুল্য পরিমাণে হইত যে পাদুকাসৃষ্টির উদ্দেশ্য পদে পদে ব্যর্থ হইয়া যাইত।

 আমাদের চেয়ে যাঁহারা বড়ো তাহাদের গতিবিধি,বেশভূষা, আহারবিহার, আরাম-আমােদ, আলাপ-আলােচনা সমস্তই আমাদের কাছ হইতে বহুদূরে ছিল। তাহার আভাস পাইতাম কিন্তু নাগাল পাইতাম না। এখনকার কালে ছেলেরা গুরুজনদিগকে লঘু করিয়া লইয়াছে; কোথাও তাহাদের কোনো বাধা নাই এবং না চাহিতেই তাহারা সমস্ত আমরা এত সহজে কিছুই পাই নাই।কত তুচ্ছ