পাতা:জীবন-স্মৃতি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৩৪৮).pdf/৭৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পিতৃদেব
৭৭

ঘরে তিনি দিনের জন্য আবদ্ধ হইলাম। সে আমাদের ভারি মজা লাগিল। পরস্পরের কানের কুণ্ডল ধরিয়া আমরা টানাটানি বাধাইয়া দিলাম। একটা বাঁয়া ঘরের কোণে পড়িয়াছিল-বারান্দায় দাঁড়াইয়া যখন দেখিতাম নিচের তলা দিয়া কোনাে চাকর চলিয়া যাইতেছে ধপাধপ শব্দে আওয়াজ করিতে থাকিতাম—তাহার উপরে মুখ তুলিয়াই আমাদিগকে দেখিতে পাইয়া তৎক্ষণাৎ মাথা নিচু করিয়া অপরাধ-আশঙ্কায় ছুটিয়া পলাইয়া যাইত। বস্তুত গুরুগৃহে ঋষিবালকদের যেভাবে কঠোর সংযমে দিন কাটাইবার কথা আমাদের ঠিক সেভাবে দিন কাটে নাই। আমার বিশ্বাস, সাবেক কালের তপােবন অন্বেষণ করিলে আমাদের মতো ছেলে যে মিলিত না তাহা নহে; তাহারা খুব যে বেশি ভালােমানুষ ছিল তাহার প্রমাণ নাই। শারদ্বত ও শারবের বয়স যখন দশ বারে ছিল তখন তাহারা কেবলই বেদমন্ত্র উচ্চারণ করিয়া অগ্নিতে আহুতিদান করিয়াই দিন কাটাইয়াছেন এ কথা যদি কোনো পুরাণে লেখে তবে তাহা আগাগােড়াই আমরা বিশ্বাস করিতে বাধ্য নই—কারণ শিশুচরিত্র নামক পুরাণটি সকল পুরাণের অপেক্ষা পুরাতন! তাহার মতো প্রামাণিক শাস্ত্র কোনো ভাষায় লিখিত হয় নাই।

 নূতন ব্রাহ্মণ হওয়ার পরে গায়ত্রী মন্ত্রটা জপ করার দিকে খুব একটা ঝোঁক পড়িল। আমি বিশেষ যত্নে এক মনে ওই মন্ত্র জপ করিবার চেষ্টা করিতাম। মন্ত্রটা এমন নহে যে সে বয়সে উহার তাৎপর্য আমি ঠিকভাবে গ্রহণ করিতে পারি।