পাতা:জীয়ন্ত - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৭৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাইরে রোয়াকে পাট পেতে বসি আহ্বান। আসুন না ? শুয়ে শুয়ে শুধু কই পড়বেন, মাথা ঘামাবেন, তাতে কি শরীর ট্ৰেকে ? খ্যামল ক্রুদ্ধ চােখে তাকায়, দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে। গ্রামপ্রান্তের কুঁড়ে ঘরে রোগশয্যায় জীবনকে শুধু ধরে রাখার সংগ্রাম চালাতে চালাতে সে আর সকলের জীবনে কিছু অনুপ্রেরণা আনার চেষ্টা করছে, তাকে এমন রূঢ়ভাবে বাইরের রোয়াকে বসে সুৰ্য্যের আলো খোলা হাওয়া সবুজ শোভা থেকে বঁাচার প্লেরণা সংগ্ৰহ করতে বলা । পরের জন্যই খ্যামল বহুকাল বেঁচেছে, আন্দামানেও সে পরের জন্য ভাৰত, ভারতবর্ষের কোটি কোটি পর। উনিশ শ” পােচ সালে বাংলা দেশটা ভাগ হওয়ার ব্যাপার নিয়ে সারা ভারতের পরকে যে সে আপন করেছিল তার জের টেনে টেনে । অথচ পাচুর কথায় সে ঘা খায়। একটা অদ্ভুত বিরোধ আছে তাদের মধ্যে, থাকে থাকে ঠোকাঠুকি হয়ে যায়। কিসে কে ঠোক্কর খেল টের পায় না। কিন্তু বেশ একটু লাগে, পথ চলতে হোচট খেয়ে আঙ্গুল ছড়ে যাওয়ার মত --মনের অমিল, হাওয়ার বিরোধ নয় মোটেই। সম্পর্ক তাদের জমে উঠেছে। পরীক্ষা দিয়ে পাচু গাঁয়ে আসার পর থেকে, শেষজীবনে শ্যামল যেন শিষ্য পেয়েছে মানসপুত্রের মত প্রিয়, এমন তারা মশগুল হয়ে যায় কথায় যে দেখে মনের সুখেই পিসীর চোখে জল আসে। তফাতে উবু হয়ে বসে সে মুগ্ধ হয়ে চেয়ে দেখে দু’টির মিল । শিষ্য বটে, অনেক গুরু তপস্যা করে জীবনে এমন একটি শিষ্য পেলে যমের মত ধন্য হয়ে যায়। তা যম এসে শিয়রে বসেছে শ্যামলের কিছুকাল হল, নতুন যুগের বামুন-ঋষি চাষী জাত থেকেই উঠে এসেছে কিশোর নচিকেতা পাচু। হাটেবিকানো একখানি যেন টিনে-মোড়া আধাস্বচ্ছ ছোট আয়না, দামী দর্পণের মত প্রতিফলনে স্তবস্তুতির মত সব ফিরিয়ে দেয় না। নিজের মনে যা স্পষ্ট নয় পাচুকে তা সাড়ম্বরে শোনাবার সাধ্য শুঠামলের নেই, পাচুর মধ্যে অবোধ জিজ্ঞান্থি নিজেকে শুশ্যামল নিজেরই লজার মত দেখতে পায় ; ফাকি দিচ্ছি ? কারণ, মুখ দিয়ে যখন তার খই ফোটার মত অনর্গল বার হতে থাকে RoW)