পাতা:জীয়ন্ত - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তবে পাকাকে সংস্কৃত লোক শুনিয়ে দেবার সাহসও নন্দ ঠাকুরের নেই। একবার কাঁটমট করে তাকিয়ে সে পুথি পড়ে যায়। পাড়ার দশ-বারোটি মেয়ে-বোঁ বসবার এত জায়গা থাকতে এককোণে ঘেঁষাৰ্ঘেযি গাদাগাদি করে বসে পাঁচালি শুনছে। তারা যেন জমাট বাঁধতে চায়, একেবারে মিশে গিয়ে দল পাকিয়ে যেতে চায় পরস্পরের সঙ্গে। পরনে মোটা শাড়ী, তবু যেন শুধু আঢাকা গায়ের চামড়াই সম্বল করে এসেছে পাচলি শুনতে, প্ৰসাদ পেতে। লজ্জায় তাই যেন পৰ্দা খুজিছে সবার মধ্যে, তারাই সকলে যেন তাদের প্রত্যেকের বোরখা। কেন ? পাকার মনে জিজ্ঞাসা জাগে। দশ জনের মধ্যে মিলিয়ে মিশিয়ে নিজেকে একেবারে লোপ করে দিতে চায় কি ? এ তাে লজ্জা নয়, এ নিছক ভয়, হাড়ে মাসে জড়ানো ভীরুতা। একটি রাখাল যেন হাতের লাঠি উচিয়ে আছে, গরু ছাগলের পাল ঠেলা ঠেলি করে ঘেঁষে এসে বঁাধছে দিল । ফল মূল বাতাস নারকেলের সন্দেশ আর শিগ্নি-তারা সকলে খুশি হয়ে খায়। খিদেও পেয়েছিল। উঠোনে পূজা, প্ৰসাদ মরে নেওয়াও বারণ। শনি বোধ হয় খুশিই হয়েছে আজ শনিবারেম সন্ধ্যায় অনেক ঘরে এরকম পূজা পেয়ে-পূজা দেবে অথচ পূজার প্রসাদ ঘরে নিতে শিউরে উঠবে এটা তো আসলে অবজ্ঞা নয়, ভয়ের পূজা। এরকম ভয়ের পূজায় মানুষও খুশি হয়, দেবতার তো কথাই নেই, মানুষের দেবতা তো মানুষেরই বানানো। নলিনী দারোগা বাড়ীর সামনের পথ দিয়ে হাটুক। তাও কেউ চায় না, সে সাপ, সে মারী,-তাতেই নলিনীর কত আনন্দ! ছড়ি ঘুরিয়ে হেলে দুলে চলন দেখলেই টের পাওয়া যায়। শনি ঠাকুর শুধু পূজা পেয়েই খুশি। কাড়াকড়ি করে তারা প্ৰসাদ খায়, হাসি আনন্দে হাল্কা হয়ে যায় বিপজ্জনক দেবতার ভয়াৰ্ত্ত পূজার কৃত্রিম থমথমে ভাব। তিমুর সুখ বুকের মধ্যে উথলে মুখে হয়ে থাকে একগাল হাসি। শুধু পাচু একটু বিষন্ন মনমরা হয়ে যায়। বলে, আমাদের বাড়ী প্রত্যেক শনিবারে শনিপূজা হয়। প্রত্যেক পূর্ণিমায় স্নাত্যনারায়ণ পূজা। Sèd