পাতা:জেলের খাতা - বিপিনচন্দ্র পাল.pdf/৩৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৮
প্রথম চিন্তা

প্রকাশিত করিয়াছেন ও প্রতিনিয়তই প্রকাশিত করিতেছেন। ইহাই ব্রহ্মাচৈতন্যের মুল লক্ষণ। এই অর্থেই ব্রহ্ম জ্ঞান-সূর্য্য। আর এই খানেই ব্রহ্মের সঙ্গে সূর্য্যের সামান্যধর্ম্ম লক্ষিত হয়। কারণ সূর্য্য স্বয়ং-প্রকাশ, অপর কিছু সূর্যকে প্রকাশিত করে না করিতে পারে না; অথচ সূর্য্য, অপর যাহা কিছু দৃষ্ট বস্তু, তৎসমুদায়কে প্রকাশিত করিতে যাইয়াই তাহার সঙ্গে সঙ্গে অবশ্যম্ভাবীরূপে আপনাকে প্রকাশিত করিতেছেন। সূর্যের এই স্বয়ং-প্রকাশত্ব ও জগৎ প্রকাশকত্ব ধর্ম্মকে ধ্যানের বিষয়ীভূত করিয়া যে সূর্য্যোপাসনা হয়, তাহাই সম্পদুপাসনা। তদ্বারা ব্রঙ্গধ্যানের সহায়তা হয়। তাহাই ব্রদোপাসনার সোপামরূপে পরিগণিত হইতে পারে।

সম্পদুপাসনা ও নিরাকারবাদ

 নির্ব্বিশেষ, নিরাকার ব্রহ্মাবস্তুকে যখন মূল উপাস্যরূপে গ্রহণ করিয়া সেই উপাসনার নিম্নতর সোপানরূপে সম্পরূপাসনা প্রতিষ্ঠিত হইয়াছে, তখন ইহার দ্বারা যে নিরাকারবাদের বা অপরোক্ষ ব্রহ্মোপাসনার মর্যাদহানি হয়, এমন বলা যায় না। ফলতঃ প্রকৃত ব্রহ্মতত্বের দিক হইতে দেখিলে খৃষ্টীয়ান, মোহাম্মদীয়ন প্রভৃতি নিরাকারোপাসকাভিমানী ধর্ম্মসম্প্রদায়সকলে যেরূপ উপাসনা প্রচলিত আছে, তাহাও স্বরূপ-উপাসনা বলিয়া গৃহীত হইবে না। খৃষ্টীয়ানেরা ঈশ্বরকে পিতা ও প্রভুরূপে ভজনা করেন। মুসলমান সাধকেরাও তাঁহাকে রাজা ও প্রভু এবং কখনো কখনো সখারূপেও ভজনা করিয়া থাকেন। আর সূক্ষ্মভাবে বিচার করিলে ঈশ্বরে পিতৃত্ব, প্রভুত্ব, বা স্বামিত্ব আরোপ করাও সম্পদজ্ঞানেরই লক্ষণ। আধুনিক নিরাকারবাদের আলোচনায় সবিস্তারে এ বিষয়ের বিচার করিব।