পাতা:জেলের খাতা - বিপিনচন্দ্র পাল.pdf/৪৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
প্রাণের কথা
৪১

আপনি লাগিয়া যায়, সেইরূপ প্রত্যেক প্রাণীর নিজের সুকৃত দুষ্কৃত, চতুপার্শ্বস্থ জড় ও জীব সকলের পূর্ব্বসঞ্চিত ও অধুনাকৃত,সুকৃত দুষ্কৃতকে আপনার মধ্যে আনিয়া ফেলে। “তুমি কার কে তোমার” বলিয়া এ অপরিহার্য নিয়তি পরিহার করা যায় না। কেউ আমার, আমি কারো হই বা না হই,— আমার পাপ পুণ্যের ভাগী তারা, তাদের সুকৃত দুষ্কৃতের ফলভোগী আমি। এ সম্বন্ধ সত্য। এ সম্বন্ধ নিত্য। মায়িক বলিয়া, চক্ষু বুজিয়া, ইহাকে অগ্রাহ্য করিলে চলিবে কেন?

 ফলতঃ ইহা মায়িকও নহে। তোমাকে আমা হইতে, আমাকে তোমা হইতে, যে পৃথক, অসম্বদ্ধ বলিয়া ভাবি—এই যে আমি আমি তুমি তুমি করি, এই যে দুনিয়ার সুখ দুঃখের ভাগ বাটোয়ারা করিয়া আপনারটি আপনি গুছাইয়া লইতে চাই, ইহাই মায়ার খেলা। এই বিচ্ছিন্ন জ্ঞানই মায়িক। কিন্তু তুমি আমি যে মূলে, এক একই প্রাণসাগরের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র তরঙ্গভঙ্গ, একই জ্ঞানসূর্য্যের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কিরণ খণ্ড-—একই অনাদ্যনন্ত নিত্যপ্রদীপ্ত পাবকরাশির সামান্য ফুলিঙ্গমাত্র— ইহাই সত্য।

তদেতত্‌ সত্যম্‌—

যথা সুদীপ্তাত্‌ পাবকাদ্বিস্ফুলিঙ্গাঃ সহস্রশঃ প্রভবস্তে স্বরূপাঃ।
তথাঞ্চরাত্‌ বিবিধাঃ সৌম্য ভাবাঃ প্রজায়ন্তে তত্র চৈবাপিযস্তি॥

 ইহাই সত্য হে সৌম্য! যে যেমন প্রজ্জলিত অগ্নি হইতে অগ্নিরূপ সহজ সহজ স্ফুলিঙ্গ প্রসূত হয়, সেইরূপ অক্ষয়। পুরুষ হইতে বিবিধ প্রাণীসকল জন্মগ্রহণ করিয়া, পুনরায় তাঁহাতেই প্রত্যাবৃত্ত হয়। এই একেতে সকলে প্রতিষ্ঠিত বলিয়া, এই একে, সূত্রে মণিগণা ইব- সূত্রে যেমন হারের মণি সকল গাঁথা থাকে, তেমনি সকলে গাঁথা বলিয়া, জড়ে ও জীবে এই বিচিত্র সম্বন্ধ প্রতিষ্ঠিত হয়। যে প্রাণ আমাতে, সেই প্রাণ তোমাতেও, তাই তোমাকে আমি বুঝি। যে জ্ঞান আমার