পাতা:জোড়াসাঁকোর ধারে.djvu/৭৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
৭০
জোড়াসাঁকোর ধারে

হল না। গণেশ আসত, তার সঙ্গে একহাত পাল্লা দিয়ে বাজাতে পারতুম তবে সুখ হত। গণেশের কাছে হার হলেও তার সুখ, সে শুধু সমানে সমানে পাল্লা দিতে চেয়েছিল। কিছুকাল বাদে তার নাতি এল। বলে, ‘খেতে পাচ্ছিনে।’ বললুম, ‘কেন, এতবড় বাজিয়ের নাতি তুমি, খেতে পাচ্ছ না, সে কি কথা। আচ্ছা, কত হলে তুমি থাকবে আমার কাছে?’ অল্পসল্পই চাইলে। রাখলুম তাকে আমার বাড়িতেই। তখন আমার ভয়ানক বাজনার শখ, এসরাজ বাজাই। শ্যামসুন্দরও আছে। ছেলেটি বললে, ‘আমায় কি করতে হবে?’ বললুম, ‘কিছুই না। সন্ধ্যেবেলা তুমি মৃদঙ্গ বাজাবে, আমি শুনব।’ প্রথমদিন সন্ধ্যেবেলা বারান্দায় যেমন বসি এই রকম দেয়ালের কাছে চৌকি টেনে বসেছি, সে মৃদঙ্গ বাজাবে। বললে, ‘গান চাই।’ শ্যামসুন্দরকে বললুম, সে আস্তে আস্তে গান ধরলে, আর ছেলেটি বাজালে। কি বাজাল, যেন মেঘের গুরু গুরু শুনতে থাকলেম। মৃদঙ্গ বাজছে, সত্যি যেন আকাশে দুন্দুভি বাজছে। রবিকা লিখে গেছেন, বাদল মেঘে মাদল বাজে। ঠিক তাই, এ বাদ্যযন্ত্র বাজছে, না মেঘ। সেদিন বুঝলুম, তার ঠাকুরদা যে বলেছিল গণেশের সঙ্গে পাল্লা দেবে, তা কেন বলেছিল। রবিকাও আসতেন কোনো-কোনোদিন, বসে মৃদঙ্গ শুনতেন সন্ধ্যেবেলা। শুনে খুব খুশি। বলতেন, ‘অবন, একে হাতছাড়া কোরো না তুমি।’ তাকে সমাজে কাজ দেবার কথা হয়েছিল। কিন্তু সমাজের কর্তারা বললেন, আর-একজন বাজিয়ে আছে এখানে, তাকে সরিয়ে কি করে একে নিই, ইত্যাদি। এই করতে করতে কিছুদিন বাদে দ্বারভাঙ্গার রাজার নজরে পড়ল। বেশি মাইনে দিয়ে আমার কাছ থেকে তাকে লোপাট করে নিয়ে গেল। রবিকা কোথায় গিয়েছিলেন, ফিরে এসে বললেন, ‘অবন, তোমার সেই বাজিয়ে?’ বললুম, ‘চলে গেল রবিকা।’ গুণীর গুণ কি চাপা থাকে? আগুনকে তো চেপে রাখা যায় না। সেই এক শুনেছিলুম মৃদঙ্গ বাজনা। অনেক খোলওয়ালাকে থামাতে হয় গানের সময়ে। এত জোরে তাল বাজায় যে সে-শব্দে গান চাপ পড়ে যায়, ইচ্ছে হয় ছুটে গিয়ে তার হাত চেপে ধরি।

 এই দেখো, বাজনার কথায় আর-একটা মজার কথা মনে পড়ে গেল। এক বীনকার, নামধাম বলব না, চিনে ফেলবে, বড় ওস্তাদ, খুব নামডাক হয়েছে; লক্ষ্ণৌর নবাব তখন মুচিখোলায় বন্দী হয়ে আছেন, এবারে যাবে তাঁকে বাজনা শোনাতে। নিজে খুব সেজেছেন, চোগাচাপকান পরেছেন, জরির গোল টুপি মাথায়, নিজের নামের সঙ্গে জুড়ে দিয়েছেন মস্ত একটা হিন্দুস্থানী উপাধি, অমুকজি