৪০ বিলে জঙ্গলে শিকার ছিলাম সে হচ্ছে এক সন্ধ্যা বেলাতে। বনের মধ্যে আমি অর মাে দাদা বনপথ দিয়ে সন্ধ্যা হয় হয় সময়ে বাড়ী ফিরছি। এমন সময় ঠিক আমাদের সম্মুখে কিছু দূরে একটি চিতা লাফিয়ে পড়ে দাদার কুকুরটিকে মুখে করে নিয়ে পালিয়ে গেল। এই চিতাটি দেখতে যেমন সুন্দর তার শরীরটিও তেমন বড় ও সুঠাম। বেচারী টেয়িয়ার “টুকটু” আমাদের আগে আগে চলছিল। একটু এগিয়ে গিয়ে থেমে ফিরে দেখছে আমরা কত দূরে। অমি তার সারমেয় লীলা সাঙ্গ হয়ে গেল। আর এক বার ঠিক এই ভাবেই মােদাদ। তার আর একটি কুকুর হারিয়েছিলেন। সেবারকারটি হাউণ্ড। সেবারে আমরা ঝিল হতে পাখী শিকার করে ফিরছিলাম, কুকুরটি আগে আগে চলছিল, এমন সময়ে পথের উপরে একটা কালাে ছায়া পড়ল। একটা চিতা বনের গা ঘেষে ছায়ায় ছায়ায় লুকিয়ে হামাগুড়ি দিয়ে এসে হঠাৎ কুকুরটিকে এক কামড় দিয়ে নিয়ে লুকিয়ে পড়ল ! এত দ্রুত ব্যাপারটা হয়ে গেল যে কুকুরের কান্না শুনে যখন আমরা চেয়ে দেখলাম তখন তার কোন চিহ্নই চোখে পড়ল না। সেদিকে একটা গুলি করবারও অবসর হ’লনা। এর শেপ অামরা তুলব বলে শপথ করলাম। কিন্তু শপথ এক কথা আর সফলতা আর এক কথা। এর পরে সেই প্রদেশেই অমির গুটিকত চিতা মেরেছিলাম। আর সেই দুই সন্ধ্যার ডাকাত এদের মধ্যেই কেউ হবে ভেবে মনকে সান্ত্বনা দিয়েছিলাম। দেরীতে হলে প্রতিশােধের মাধুৰ্য্যটা হ্রাস হয়ে যায় এই যা দুঃখ। দেশী কুকুর হচ্ছে চিতার প্রিয় খাদ্য। কুকুরেরাও সে কথা জানে। কত বার সন্ধ্যার সময় দেখেছি দেশের বাড়ীর প্রাচীর ঘেরা আঙ্গিনার মধ্যে একটু খানি আশ্রয় পাবার জন্যে তারা প্রাণপণে লড়াই করছে। একবার আমার তাঁবু হতে একটা কুকুরকে তাড়িয়ে দিয়েছিলাম। বেচারী বেশ আরামে একটা কোণে গুটীসুটি হয়ে শুয়েছিল। পর দিন যখন শুনলাম তাকে এমন করে বার করে দেবার ফলে চিতএসে রাত্রিতে ধরে নিয়েগেছে তপন ভারি অপশষ হল। পাহাড়ের জঙ্গলে চিতা শিকার করা বড় মুস্কিল ; এরা গুহার মধ্যে আশ্রয় নিয়ে থাকে জঙ্গল পেটালে বেরয় না। শুধু গরু কি ছাগল মেরে খায়, মৃত গরু কি ছাগলের কাছে হত্যা দিয়ে বসে থাকা ছাড়া তার দর্শন পাবার উপায় নাই। আমরা একবার বঙ্গীয় ব্যারাজের নজর স্বরূপে গুটকিত বড় বড় মােস এদিকে ওদিকে বেঁধে দিয়েছিলাম। যার ধন সে পেলে না। প্রতি দিনই কিন্তু চিতা এসে এ গুলিকে শিকার করে রেখে যেত। অথচ যখন তাদের নাগাল পাবার জন্য রাত দুপ্রহর ধরে এই সব মরা মেষ পাহারা দিয়ে বসে থাকতাম তখন তাদের টিকিও দেখা যেত না। তার পরে ভােরে শিকারীরা এসে বলত আমরা চলে আসার পর শেষ রাত্রে এসে তারা সে গুলি নিঃশেষ করে গেছে। এ খবর যেন আমাদের কাটা ঘায়ে নুণের ছিটের মত লাগত। এ দিকে বাঘেরাও এদের উপ-বে হতাশ হয়ে আমাদেরও নিরাশ করলে। সংবাদ পেয়েছিলাম সেখানে অন্ততঃ যুগল শালের আবির্ভাব হয়েছিল। চাতুরী আর দুষ্ট বুদ্ধিতে পণ্ডিত হলেও চিতা অনেক সময় ভারি ভীরুর মত ব্যবহার করে। ক’দিন ধরে আমরা একটা মস্ত চিতার সন্ধানে ফিরছিলাম, কিন্তু কৃতকার্য হই নি। এই ক’দিন আগেই সে একছত্রী সম্রাটের মত চারি দিকে গাভী বশীবদ্দ আর গােবংসের যথেচ্ছা নজর আদায় করে ফিরছিল। নিরাশ হয়ে আমরা অন্যত্র যাব মনস্থ করছি এমন সময় এক সুপ্রভাতে শিকারীরা তার পায়ের টাটকা দাগের আনন্দ সংবাদটা নিয়ে এল। সেই পদাঙ্ক অনুসরণ করে, তার রাত্রির '
পাতা:ঝিলে জঙ্গলে শিকার - কুমুদনাথ চৌধুরী - প্রিয়ম্বদা দেবী.pdf/৫৮
অবয়ব