পাতা:ডিটেক্‌টিভ পুলিস (প্রথম কাণ্ড) - প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়.pdf/৬৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ডাক্তার বাবু।
৫৭

আমাকে আমাদিগের বাড়ীতেই বাধ্য হইয়া থাকিতে হইয়াছিল। বাড়ীতে আমার একটা তৃতীয় বৎসর বয়স্কা কন্যা ছিল। সেই সময় আমার ঐ কন্যাটীর একটু অসুখ বোধ হইয়াছিল। অসুখ অবস্থায় একদিবস সন্ধ্যার সময় সে এরূপ ক্রন্দন করিতে আরম্ভ করে যে, কোন প্রকারে কেহই তাহাকে সান্ত্বনা করিতে সমর্থ হয় না। আমিও প্রথমে তাহাকে সান্ত্বনা করিবার নিমিত্ত অনেক চেষ্টা করিলাম, কিন্তু কোন রূপেই তাহাকে শান্ত করিতে সমর্থ না হওয়ায় হঠাৎ আমার প্রচণ্ড ক্রোধের উদয় হইল। হিতাহিতজ্ঞান-বিবর্জ্জিত হইয়া, অপত্যস্নেহের সুদৃঢ় বন্ধন ছেদন করিয়া, আমার নিকট যে সকল ঔষধ ছিল, তাহার মধ্য হইতে একটী ঔষধ বাহির করিলাম। উহার কিয়দংশ একটী কাচপাত্রে ঢালিয়া লইয়া, কিঞ্চিৎ জল সহযোগে উহা নিজহস্তেই আমার সেই কন্যাকে পান করাইয়া দিলাম। মহাশয়! বলিব কি, দেখিতে দেখিতে তাহার রোদন থামিল, সে ঘুমাইয়া পড়িল; কিন্তু সেই অঘোর নিদ্রা হইতে সুকুমারী কন্যা আমার আর উত্থিত হইল না। পিতামাতা স্ত্রী প্রভৃতি সকলেই বুঝিলেন, প্রবল রোগের প্রতাপেই আমার অবোধ কন্যা ইহজীবন পরিত্যাগ করিল। সকলের অবস্থা আমি স্বচক্ষে সন্দর্শন করিলাম, কিন্তু কাহাকেও কিছু বললাম না। আপনার হৃদয়ের ভিতর মুখ লুকাইয়া একবারমাত্র অতি অল্পকালের নিমিত্ত রোদন করিয়াছিলাম, কিন্তু আমার প্রস্তর-কঠিন মন তখনই আরও দৃঢ়তর হইল। মনের অবস্থা দেখিয়া আসন্ন দুঃখ সুদূরে পলায়ন করিল।