পাতা:তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা (ত্রয়োদশ কল্প তৃতীয় খণ্ড).pdf/৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

88 তত্ত্ববোধিনী পত্রিক অর্থাৎ কাম্য বিষয় উপভোগ দ্বারা কামনার কদাচ শান্তি হইতে পারে না, পরন্ত অগ্নিতে যেরূপ ঘৃতাহুতি দিলে তাহা নিৰ্ব্বাণ না হইয়া বরং আরও প্রজাfলত হইয়া উঠে তন্দ্রপ বিষয়-উপভোগের দ্বারা কামনার নাশ না হইয়া আরও বৃদ্ধি হইয়া থাকে। এই জন্যই মহাত্মা ভর্তৃহরি দুঃখ প্রকাশ পূর্বক বলিয়াছেন যে “তৃষ্ণ ন জীর্ণ বয়মেব জীর্ণঃ ॥” তৃষ্ণাকে ভোগ দ্বারা জীর্ণ করিতে পারিলাম না অর্থাৎ তৃষ্ণা সমভাবে রহিল কিন্তু আমরা নিজেই জীর্ণ হইলাম । দ্বিতীয়তঃ কেবল বাহ্য বল প্রয়োগ পূর্বক কৰ্ম্মেন্দ্রিয়কে রুদ্ধ করিলে যে কাৰ্য্যসিদ্ধি হয় না তদ্বিষয়ে শ্ৰীকৃষ্ণ অর্জুনকে স্পষ্ট উপদেশ দিয়াছেন । যথা “কৰ্ম্মেন্দ্রিয়াণি সংযম্য য আস্তে মনসা স্মরন্থ । ইন্দ্রিয়ার্থন বিমূঢ়াত্মা মিথ্যাচার: স উচ্যতে ॥” গীতা । অর্থাৎ যে মূঢ় ব্যক্তি বাগাদি কৰ্ম্মেন্দ্রিয়কে সংযত করিয়া মনে মনে শবদ স্পর্শাদি স্মরণ পূর্বক অবস্থিতি করে সে মিথ্যাচারী । এখন যে বিষয়ভোগ করিলে এবং কেবল বাহ্য বল প্রয়োগ পূর্বক বাহ্যেন্দ্রিয়কে নিরোধ করিবার চেষ্টা করিলে যে বাস্তবিক ইন্দ্রিয়নিগ্রহ হয় না তাহ একপ্রকার প্রমাণিত হইল । এই মনোবৃত্তি নিগ্রহ সাধনের অামাদিগের আধ্যাত্মিক শাস্ত্রমতে দুইটী প্রধান উপায় আছে। প্রথম বিচার ও বৈরাগ্য, দ্বিতীয় অষ্টাঙ্গ যোগসাধন । শ্ৰীমচ্ছঙ্করাচাৰ্য্য প্রশ্নোত্তরে লিখিয়াছেন,

  • কো দীর্ঘরোগে ভব এব সাধো । কিমেষধং তস্য বিচার এব।”

অর্থাৎ শিষ্য জিজ্ঞাসা করিতেছে যে দীর্ঘরোগ কাছাকে বলে, গুরু উত্তর করি লেন হে সাধো এই সংসারই মনুষ্যের দীর্ঘ রোগ। পুনরায় শিষ্য প্রশ্ন করিতেছে সেই দীর্ঘ রোগের ঔষধ কি, গুরু বলিতেছেন যে বিচারই তাহার ঔষধ অর্থাৎ যথার্থ শাস্ত্রানুযায়ী বিচার দ্বারা বিবেক জন্মে এবং ঐ বিবেক জন্যই সংসার-রোগের নিবৃত্তি হয়। যোগবশিষ্ঠ রামায়ণে ও লিখিত অাছে যে “দীর্ঘসংসাররোগস্য বিচারোহি মহৌষধং” অর্থাৎ সদসৎ বস্তুর বিচারের আশ্রয় গ্রহণ করিলে বুদ্ধি তীক্ষ হইয়া থাকে এবং তদ্বারাই জীব তত্ত্বজ্ঞান লাভ করে। বাস্তবিক ব্রহ্মবিচার দীর্ঘকাল সংসারস্থিতি-রূপ রোগশান্তির পক্ষে মহৌষধ। গীতাশাস্ত্রে যোগেশ্বর শ্ৰীকৃষ্ণ অর্জুনকে মনোনিগ্রহ সম্বন্ধে নিম্নলিখিত উপদেশ প্রদান করিয়াছেন । “অসংশয়ং মহাবাছে। মনোদুৰ্নিগ্ৰহং চলং । অভ্যাসেনতু কৌন্তেয় বৈরাগ্যেনচ গৃহ্যতে ॥” হে মহাবাহে অৰ্জ্জুন ! মন যে দুনিগ্রহ ও চঞ্চল তাহাতে কিছুমাত্র সন্দেহ নাই কিন্তু অভ্যাস ও বৈরাগ্যের দ্বারা উহ। নিগৃহীত হইয়া থাকে। যোগশাস্ত্রও এই রূপ স্বীকার করিয়াছেন, যথা—“অভ্যাসবৈরাগ্যাভ্যাং তন্নিরোধঃ ॥” অর্থাৎ অভ্যাস ও বৈরাগ্যের দ্বারা সমুদায় মনোবৃত্তি নিরুদ্ধ হইয়া থাকে । যোগীর এই সময় একাগ্র ও নিরুদ্ধাবস্থা উদয় হইরার লক্ষণ প্রকাশ পায় । অতএব এই দুই অবস্থাকে স্থায়ী রাখিবার জন্য অভ্যাস আবশ্যক করে, কারণ একমাত্র অভ্যাস দ্বারাই উহ। দৃঢ় রূপ স্থায়ী হয়, অন্য উপায় দ্বারা তাহা হয় না। বৈরাগ্যাপেক্ষা অভ্যাসের ক্ষমতা অধিক ; এমন কি, দৃঢ অভ্যাসকে দ্বিতীয় স্বভাব বলা যায় ইহা সকলেই অবগত আছেন। যোগশাস্ত্র বলেন “তত্রস্থিতৌ যত্নোহ ভ্যাসঃ’ অর্থাৎ শুদ্ধ চিদাত্মাতে २७, कझ ७ ef**