পাতা:তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা (ত্রয়োদশ কল্প প্রথম খণ্ড).pdf/২৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

- - - 4 - - - ২২২৩ দিন সংসারই তাহার একমাত্র অবলম্বন ছিল ; কিন্তু এখন বৈরাগ্য আসিয়া এই অবলম্বন-রক্ষু ছিন্ন করিয়া দেওয়াতে আত্মার অত্যন্ত ব্যাকুলতা আসিয়া পড়িল ;– সে কোথায় যাইবে, কাহার আশ্রয় লইবে, কাহার নিকটে যাইলে শান্তিলাভ করিতে পারিবে, এই সকল চিন্তায় আত্মা আকুল হইয়া পড়িল । তখন বিবেক আসিয়া তাহাকে সাহস প্রদান পূর্বক বলিতে লাগিল যে, “এত আকুল হইবার কিছুমাত্র প্রয়োজন নাই ; মনুষ্যের, সংসারের মঙ্গলময়ী জননীকে ছাড়িয়া, কেবল সংসারে পরিতৃপ্তি হইতে পারে না ; মনুষ্যের আত্মা অবিনশ্বর সুতরাং ইহা নশ্বর ধূলিরাশিতে চিরকাল তৃপ্ত থাকিতে পারে না, তাহার তৃপ্তিস্থান সংসারের অতীত সেই আনন্দধাম ‘জরা নাহি, শোক নাহি, মরণ নাহি যে লোকে । এখন হইতে আর সংসারে আসক্ত থাকিও না ; সংসারে নির্লিপ্তভাবে অবস্থান করিয়া সেই শুভ্র সত্যস্বরূপ সুন্দর পরমপুরুষের প্রেমমুখ দেখিতে থাক—তোমার শোকতাপ হৃদয়-ভার সমস্ত দূর হইয়া যাইবে।” বৈরাগ্য অভাব আনয়ন করে, বিবেক সত্যের বিমল জ্যোতি দ্বারা সেই অভাব পূর্ণ করিয়া দেয় । সেই বৈদিক কালে, যখন আর্য্য ঔপনিবেশিকগণ নূতন নুতন স্থান অধিকার করিয়া, নূতন নূতন জাতিদিগকে পরাজিত করিয়া সংসার-সর্বস্ব হইয়া পড়িয়াছিল, সেই সময়ে কতকগুলি উন্নতমনা ঋষির সংসারে তৃপ্তিলাভ করিতে না পারিয়া অরণ্যে যাইয়া ব্ৰহ্মজ্ঞানের আলোচনা করিতে লাগিলেন এবং সাধারণের মধ্যে ংসারাসক্তি প্রবল দেখিয়া ও তাহাদিগের মধ্যে ব্রহ্মজ্ঞান প্রবেশ করানো অসাধ্য তত্ত্ববে ধিনী পত্রিকা ১৩ কল্প, ১ ভাগ கடி_ _ _ - سید عتبع== جمچحعه সাধন বিবেচনা করিয়া এই স্থির করিলেন যে, র্যাহারা সংসারের মায়াবন্ধন ছিন্ন ক- . রিয়া,সমুদয় মানমর্য্যাদা বিষয়বিভব প্রভৃতি । নানা ভোগস্থখের আশায় জলাঞ্জলি দিয়া অরণ্যে বাস করিতে পারিদেন, র্তাহাদিগেরই ব্রহ্মজ্ঞানে অধিকার, উপনিষদে অধিকার ; র্তাহারা আদেশ করিলেন যে, “অরণ্যে তদধীয় ত” উপনিষদে নিহিত ব্রহ্মোপদেশ অরণ্যেই পড়িতে হইবেক । কিন্তু সেই বৈদিক কালের অনেক পরে, যখন জ্ঞানের অধিকতর চর্চা হইল, যখন তত্ত্বজ্ঞানী ব্রহ্মবাদীগণ ঈশ্বরের সহিত ংসারের ঘনিষ্ট সম্পর্ক বুঝিলেন, তখন র্তাহারা বলিলেন “ব্রহ্মনিষ্ঠে গৃহস্থঃ স্যাৎ তত্ত্বজ্ঞান পরায়ণ । যদ্যৎকৰ্ম্ম প্রকুৰ্ব্বাত, তদ ব্রহ্মণি সমৰ্পয়েৎ ॥” গৃহস্থ ব্যক্তি ব্রহ্মনিষ্ঠ ও তত্ত্বজ্ঞান-পরায়ণ হইবেন ; যে কোন কৰ্ম্ম করুন, তাহা পরব্রহ্মেতে সমর্পণ করিবেন । ইহাই ব্রহ্মনিষ্ঠ গৃহস্থের ধৰ্ম্ম, তাই ব্রাহ্মধৰ্ম্ম বলেন, “মাতা পিতা, ভ্রাতা ভগিনী ও স্ত্রীপুত্র প্রভৃতি পরিবারগণের সহিত সম্বন্ধ পরিত্যাগ করিয়া সন্ন্যাসী হইবেক না । সেই সম্বন্ধ মঙ্গলস্বরূপ ঈশ্বর হইতে সংঘটিত হইয়াছে ; তাহার উচ্ছেদ করা কর্তব্য নহে । গৃহস্থ হইয়া সেই সম্বন্ধ রক্ষা করি বেক । তাহাতেই যোজিতচিত্ত হইয়া সংসার-ধৰ্ম্মের অনুষ্ঠান করিবেক । সম্পৎ কালে র্তাহারই অনুগত হইয়া চলিবেক, বিপৎকালে তাহারই শরণাপন্ন হইবেক । শরীর পৃথিবীতে সঞ্চরণ করিবে , কিন্তু আত্মা পরমাত্মাতে অবস্থিত থাকিবে । কৰ্ম্মের সময় তাহাতে থাকিয়াই কৰ্ম্ম করিবে ; বিশ্রামের সময় তাহতে থাকি । য়াই বিশ্রাম করিবে । এইরূপ ব্রহ্মনিষ্ঠ হইয়া সংসারে প্রবিষ্ট হইবে।”