পাতা:তরুণের আহ্বান - সুভাষ চন্দ্র বসু.pdf/১০১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 আমি আজিকার এই অভিভাষণে ব্যক্তিগত সাধনার উপর বেশি জোর দিতেছি না। তার কারণ এই যে ভারতবাসী কোনোদিনই বাক্তিগত সাধনা ভুলিয়া যায় নাই। ব্যক্তিত্ব বিকাশের চেষ্টা আমরা কোনোদিনই ত্যাগ করি নাই। অবশ্য পাশ্চাত্য দেশের বা অন্যান্য দেশের ব্যক্তিত্বের আদর্শ এক নয়। কিন্তু আমাদের বর্তমান পরাধীনতা ও সকল প্রকার দুর্দশার মধ্যেও যে আমাদের দেশে কত মহাপুরুষ জন্মাইয়াছেন এবং এখনো জন্মাইতেছেন তাহার একমাত্র কারণ এই যে খাঁটি মানুষ সৃষ্টির প্রচেষ্টা আমাদের জাতি কোনোদিন ভুলে নাই। কিন্তু আমরা ভুলিয়া গিয়াছিলাম Collective Sadhana বা সমষ্টিগত সাধনা; আমরা ভুলিয়া গিয়াছিলাম যে জাতিকে বাদ দিয়া যে সাধনা—সে সাধনার কোনো সার্থকতা নাই। তাই সমাজগঠন-বিরোধী ও জাতিগঠন-বিরোধী বৃত্তি আমাদের মানসক্ষেত্রে জন্মিয়াছে এবং ঐরূপ প্রতিষ্ঠান পরগাছার মতো আমাদের জাতীয় জীবনকে ভারগ্রস্ত ও শক্তিহীন করিয়া তুলিয়াছে। আজ বাংলার তরুণ সমাজকে রুদ্রের মতো বলিতে হইবে— জাতি-সমাজ-গঠন-বিরোধী বৃত্তিনিচয় আমরা কুসংস্কারজ্ঞানে বিষবৎ পরিত্যাগ করিব এবং জাতি-সমাজ-গঠনের প্রতিকূল সমস্ত প্রতিষ্ঠান আমরা একেবারে নির্মূল করিব।

 ব্যক্তিত্ত্ব বিকাশ সম্বন্ধে আমি আজ মাত্র একটি কথা বলিব। “সাধনা” বলিতে অনেকে অনেক রকম বুঝিয়া থাকেন এবং সাধনার বিভিন্ন প্রকার ব্যাখ্যাও শুনিতে পাওয়া যায়। আমার ধারণা এই যে সাধনার উদ্দেশ্য মনুষ্যজীবনের রূপান্তর করা। রূপান্তর সাধন করিতে হইলে বাহির হইতে চেষ্টা করিলে চলিবে না— মানুষের জীবন নূতন আদর্শের দ্বারা অনুপ্রাণিত করিতে হইবে। আদর্শের চরণে নিজেকে আত্মসমর্পণ করিতে হইবে— ঐ আদর্শের অনুসরণে নিজেকে নিঃশেষে বিলাইয়া দিতে হইবে। আদর্শের চরণে আত্মবলিদান করিতে পারিলে— মানুষের চিন্তা, কথা ও কার্য— একসুরে বাঁধা হইবে; তাহার ভিতর বাহির এক হইয়া যাইবে; তাহার সমস্ত জীবন এক আদর্শসূত্রে গ্রথিত হইবে, সে তখন তাহার জীবনে নূতন রস, নূতন আনন্দ, নূতন অর্থ খুঁজিয়া পাইবে। সমগ্র বিশ্বজগৎ তাহার নিকট নূতন আলোকে উদ্ভাসিত হইয়া উঠিবে।

 বর্তমান যুগোপযোগী সাধনায় যদি প্রবৃত্ত হইতে হয় তাহা হইলে দেশাত্মবোধকেই জাতির আদর্শ বলিয়া গ্রহণ করিতে হইবে। যাহা এই

৯৬