পাতা:তরুণের আহ্বান - সুভাষ চন্দ্র বসু.pdf/১১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

ক্রমে ক্রমে মুক্তির উষালগ্ন যত আসন্ন হইয়া উঠিতেছে আমাদের দুঃখ ও বেদনার পাত্র ততই ভরিয়া উঠিতেছে। আমাদের শাসকরা যত দেখিতেছেন যে ক্ষমতা তাঁহাদের হাত হইতে ক্রমেই চলিয়া যাইতেছে ততই তাঁহারা অন্যান্য স্থানের স্বৈরতন্ত্রীদের মতোই কঠোর হইতে কঠোরতর হইয়া উঠিতেছেন। ইহা খুবই স্বাভাবিক। যদি তাঁহারা ক্রমশ সভ্যতার সব ভণিতা পরিহার করেন, দ্বিধাহীনভাবে পীড়ন চালাইতে ভদ্রতার মুখোশ খলিয়া ফেলেন— তবে কেহ যেন বিস্মিত না হন। পাঞ্জাব ও বাংলা বর্তমান মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি নিপীড়ন ভোগ করিতেছে। প্রকৃতপক্ষে ইহা অভিনন্দনযোগ্য এই কারণে যে আমরা স্বরাজ লাভের জন্য এইভাবে নিজেদের যোগ্য করিয়া তুলিতেছি। ভগৎ সিং ও বটুকেশ্বর দত্তের মতো বীরদের অনুপ্রেরণা দমননীতির সাহায্যে দাবাইয়া দেওয়া যাইবে না; বরং নিপীড়ন ও ক্লেশ, অপমান ও দুঃখবরণের ভিতর দিয়াই বীরচরিত্র গড়িয়া উঠিবে। তাই আসুন, আমরা সর্বান্তঃকরণে দমন-নিপীড়নকে স্বাগত জানাই। যখন উহা আসিবে তখন আমরা উহার পূর্ণে সদ্ব্যবহার করিব।

 আপনারা হয়তো জানেন না পাঞ্জাবের অতীত ইতিহাস হইতে কত কাহিনী লইয়া বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করা হইয়াছে। পাঠকদের এইভাবে মনোরঞ্জন করা হইয়াছে। আপনাদের বীরদের কাহিনী লইয়া কবিরা কবিতা রচনা করিয়াছেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও তাহা করিয়াছেন। প্রত্যেক বাঙালীর গৃহে সেই-সব কবিতা আজ সুপরিচিত। আপনাদের সন্তদের বাণী ললিত বাংলায় অনূদিত হইয়াছে। বাংলার অগণিত মানুষ সেই-সব বাণীতে সান্ত্বনা ও প্রেরণা খুঁজিয়া পায়। এই সাংস্কৃতিক ভাব-বিনিময়ের অনুরূপ ঘটনা রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও ঘটিয়াছে। শুধু ভারতের জেলে নয়, সুদূর ব্রহ্মদেশের জেলে ও সমুদ্রপারে আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে বাংলার ও পাঞ্জাবের রাজনৈতিক তীর্থযাত্রীরা পরস্পর মিলিত হইয়াছেন।

 বন্ধুগণ, আজ এই আলোচনার সূত্রে আমি যদি কিঞ্চিৎ বিশদভাবে রাজনৈতিক প্রশ্ন উত্থাপন করিয়া উহার উত্তর দিবার চেষ্টা করি তবে সেজন্য আমি ক্ষমা চাহিব না। আমি জানি এদেশে এমন লোক আছেন, এমন-কি কিছু প্রসিদ্ধ ব্যক্তিও আছেন, যাঁহারা মনে করেন যে “পরাধীন জাতির কোনো রাজনীতি নাই” এবং ছাত্রদের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত হওয়া উচিত নয়। কিন্তু

১১০