পাতা:তরুণের আহ্বান - সুভাষ চন্দ্র বসু.pdf/১২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

সতরাং সে চেষ্টা হইতে বিরত থাকিব। কিন্তু একটি কথা জোর দিয়া বলিতে চাই। আমাদের এই কালজীর্ণ দেশে যদি যৌবনের পুনরুজ্জীবন চাই, সমগ্র ভারতবর্ষকে যদি একটি মহান জাতিরূপে সংহত করিতে চাই, তবে আমাদের ভালোমন্দ বোধের নৈতিকতার মজ্জাগত পুরানো ধারণা ঢালিয়া সাজিতে হইবে। দার্শনিক পরিভাষায় বলিতে গেলে সামাদের পুরাতন অথচ বর্তমানেও প্রচলিত সামাজিক ও নৈতিক মূল্যগলির পুনর্মূল্যায়ন করিতে হইবে।

 গভীর বিচার ছাড়াই, আপাতদৃষ্টিতেই দেখা যাইবে যে আমাদের দেশের সাম্প্রতিক আন্দোলনগুলি দৃঢ়মূল নহে, একান্তই ভাসা ভাসা; মানষের আত্মার গভীরে আবেদন সৃষ্টি না করিয়া, অভাব-অভিযোগের প্রান্তসীমা মাত্র স্পর্শ করিয়াছে। অবশ্য আমার বলার উদ্দেশ্য ইহা নয়। এগুলি কোনো উদ্দেশ্য সাধন করে না, করিতেও পারিবে না। আসলে ইহাদের উদ্দেশ্য সাধনের ক্ষমতা অত্যন্ত ক্ষীণ। সমগ্র জাতিকে জাগাইতে হইলে এইরূপ অগভীর আন্দোলন দৃশ্যত আমাদের কোনো কাজে আসিবে না। আমাদের চরম লক্ষ্য জাতির জাগরণ। কোনো অগভীর জাগরণ নহে। অন্তরাত্মার জাগরণ। সতরাং সমগ্র জাতিকে জাগাইবার জন্য আমাদের উদ্যোগী হইতে হইবে। অনতিকালমধ্যে এই উদ্দেশ্য সাধনের জন্য উপায় খুঁজিয়া বাহির করিতে হইবে।

 আমাদের এই প্রাচীন দেশের সভ্যতাও প্রাচীন। তৎসত্ত্বেও ইহার অন্তর্নিহিত শক্তি সম্পূর্ণরূপে নিঃশেষিত হয় নাই। জাতি হিসাবে আমরা অনেক ঘাত-প্রতিঘাত বীরোচিতভাবে অতিক্রম করিয়াছি। কখনো কখনো পর্যুদস্ত হইলেও আজও আমরা সম্পূর্ণরূপে লোপ পাই নাই। যদি কখনো শ্রান্ত বা অবসাদগ্রস্ত হইয়া থাকি, তাহাতে অবাক হইবার কিছু নাই। কারণ ঐ-সব মুহূর্ত আমাদের বিশ্রামের সুযোগ আনিয়া দিয়া জীবনরক্ষার ব্যবস্থা করে। আজ আমরা ক্লান্ত এবং দ্বিধাগ্রস্ত হইয়া পড়িলেও জাতি হিসাবে আমরা মৃত নহি! জাতি ও বাক্তি হিসাবে, চিন্তা ও কর্মের ক্ষেত্রে, সৃজনীপ্রতিভার জন্য, আমাদের গৌরব বোধ করিবার সংগত কারণ রহিয়াছে। এইগুলিই প্রাণ-স্পন্দনের সুনিশ্চিত লক্ষণ। আমাদের মধ্যে এই ধরনের একজনও অবশিষ্ট না থাকিলে, জাতির জাগরণের সকল আশাই বিলুপ্ত হইবে।

 কিন্তু প্রাণ-স্পন্দন আমাদের সংশয় করিবার নয়। জাতির পুনর্জাগরণের জন্য সকল উপাদানও সমভাবে বিদ্যমান। এই কারণেই গৌরবোজ্জল ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখিবার উদ্দীপনা এখনো আমাদের অন্তরে রহিয়াছে।

১২২