পাতা:তরুণের আহ্বান - সুভাষ চন্দ্র বসু.pdf/১৪৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

হইয়াছে— কিন্তু তোমাদের কংগ্রেসে কি হইয়াছে? এরূপ প্রশ্ন শুনিলে কাহার ক্ষমতা আছে যে তাঁহাদের বুঝাইতে পারে যে কংগ্রেসের উদ্দেশ্য সকল রোগের মূলে যে মহাব্যাধি (যে মহাবাধির বিরাম না হইলে অন্য কোনো রোগ নির্মূল হইতে পারে না) সেই মহাব্যাধি নিরাকরণ করা। আমাদের যারতীয় দুর্দশার মূল কারণ যদি আমাদের পরাধীনতা হয় তাহা হইলে যে পর্যন্ত আমরা পরাধীনতা ঘোচাইতে না পারিব সে পর্যন্ত আমরা সুস্থ সবল ও কর্মঠ জাতি হইতে পারিব না। অতএব আমাদের সমস্ত শক্তি, উদ্যম, সম্পদ ও সময় স্বাধীনতা লাভের জন্য বায় করা উচিত। কিন্তু মুস্কিল এই যে আমরা শক্তি ও সম্পদ ব্যয় করিয়া স্বাধীনতার পথে কতদূর অগ্রসর হইতে পারিলাম তাহা বাহিরের কোনো মাপকাঠির দ্বারা অপরকে বুঝানো যায় না। হাসপাতালের বা বিদ্যালয়ের উন্নতি যত সহজে অপরকে বুঝানো যায় রাষ্ট্রীয় উন্নতি সেভাবে বুঝানো যায় না। তাই বিষয়াত্মিকা বুদ্ধি যাঁহাদের তাঁহারা মনে করেন যে আমরা স্বরাজ বা কেবল অর্থের অপব্যয় করি এবং বাজে কাজে সময় নষ্ট করিয়া থাকি। জাতির মধ্যে আদর্শবাদ আরো সঞ্চারিত না হইলে রাষ্ট্রীয় বুদ্ধি জাগিবে না— রাষ্ট্রীয় বুদ্ধি না জাগিলে রাষ্ট্রীয় সংগ্রামের অর্থ তাঁহারা বুঝিবেন না— রাষ্ট্রীয় সংগ্রামের সার্থকতা উপলব্ধি না করিলে তাঁহারা রাষ্ট্রীয় স্বাধীনতার জন্য অকাতরে অর্থ ও সময় ব্যয় করিবেন না এবং সর্বস্বপণ করিতে না পারিলে জাতি কোনোদিন স্বাধীন হইবে না।

 তাই আমার অনেক সময়ে মনে হয় যে আমাদের দেশবাসীর মধ্যে Political-inentality-র বড়োই অভাব। এই রাষ্ট্রীয় মনোভাব বা রাষ্ট্রীয় বুদ্ধি সৃষ্টি করাই কংগ্রেসের অন্যতম উদ্দেশ্য। জাতির মধো সূক্ষ্ম বুদ্ধি ও সূক্ষ্ম বিচারশক্তি না আসিলে সে জাতি বহু বৎসর ধরিয়া সর্বস্ব বিলাইয়া আদর্শের পশ্চাতে ছুটিবার সামর্থ্য পাইবে না। এই বুদ্ধি ও বিচারশক্তি অনিবার একমাত্র উপায় সেই জাতির মধো আদর্শবাদ সঞ্চার করা। এই আদর্শবাদ সঞ্চার করিতে হইলে জাতির প্রাণের অন্তরতম প্রদেশে আঘাত করিতে হইবে—তাহার স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা—আত্মবিকাশের স্পৃহা জাগাইতে হইবে। স্বাধীনতার জন্য তীব্র ক্ষুধা জাগিলে সে জাতি তখন জীবনপণ করিয়া সাধনায় প্রবৃত্ত হইবে। আপ্রাণ চেষ্টা ও ব্যাকুল সাধনা জাতি যেদিন করিতে পারিবে জাতি সেদিন মুক্ত হইবে।

 জনৈক বন্ধু আমাকে সেদিন জিজ্ঞাসা করিয়াছিলেন— গত দুই বৎসর

১৩৯