পাতা:তরুণের আহ্বান - সুভাষ চন্দ্র বসু.pdf/১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তোমরা সংগঠিত হও

 তোমাদের মাঝে আসিয়া দাঁড়াইলে আমার বারো বছর আগের ছাত্রজীবনের ঘটনাবলী মনে পড়িয়া যায়। সে সময় আমার মন এই কথা ভাবিয়া পীড়িত হইত যে আমরা কি আমাদের জীবনে একঘেয়েমির প্রভাব কাটাইতে পারি না, আমাদের চিরস্থাযী রুটিন-বাঁধা৷ কর্মসূচীকে রাইয়া দিতে পারি না, অজানার অভিসারে সম্পূর্ণ্য অনিশ্চিতের পথে কি চলিতে পারি না? আমাদের জীবনে কোনো বৈচিত্র্য, নূতনত্ব বা অনিশ্চয়তা নাই। আমাদের জীবনে অ্যাডভেঞ্চারপ্রীতি বলিয়া কোনো কথাই জানা নাই। বর্তমান ব্রিটিশ সাম্রাজ্য ইংরেজদের অ্যাডভেঞ্চার-প্রীতি হইতেই জন্মলাভ করিয়াছে। যখন একটি গোটা জাতি অ্যাডভেঞ্চাবের জন্য পাগল হইয়া ওঠে তখনই ইহা সমৃদ্ধির পথে আগাইয়া যায়।

 আমি ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখি বলিয়া একটি সংবাদপত্ৰ কলমের পর কলম আমার নিন্দায় ব্যয় কবে। উক্ত সংবাদপত্রে বহু মিথ্যা কথা লেখা হইতেছে। কিন্তু একটি সত্য কথা তাহারা লিখিয়াছে যে আমাকে প্রেসিডেন্সি কলেজ হইতে বহিস্কার করা হইয়াছিল। সত্যই ঐ বহিস্কারের ঘটনা আমার জীবনের মোড় ঘুরাইয়া দিয়াছিল। যখন ছকবাঁধা পথে চলিতে আমরা বিরত হই তখনই আমরা আমাদের অন্তর্নিহিত শক্তি অনুভব করিতে সক্ষম হই। যুবক ও ছাত্ররা বিদ্রোহ করিয়াছে এই মর্মে বহু অভিযোগ শুনিয়া থাকি। যদি তাহাই হয় তবে ঐ বিদ্রোহ কোনো ব্যক্তির সৃষ্টি বলিয়া দাবি করার স্পর্ধা কাহারো নাই। ইহা যুগের লক্ষণ মাত্র। কেহই বুকে হাত রাখিযা বলিতে পারবে না ৩ ফেব্রুয়ারি বাংলায় ছাত্ররা প্ৰভূত সাফল্যের সঙ্গে যে হরতাল পালন করিয়াছে তাহা লোক-দেখানো ব্যাপার মাত্র ও নেতারাই উহা ঘটাইয়াছেন। উহা যে একটি ব্যাপক জাগরণের ফল এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ করা চলে না। এ জাগরণের তরঙ্গ রুধিবে কে? যখন ছাত্রদের জাগরণ ঘটিয়াছে তখন উহা ঠিকভাবে খাঁটি পথে পরিচালিত করিতে হইবে।

 ছাত্ররা উচ্ছৃঙ্খল হইয়া উঠিয়াছে-এই কথা বলিয়া আকাশ বাতাস বিদীর্ণ করা হইতেছে। শৃঙ্খলা ও আইন-কানুন অবশ্যই মানিয়া চলিতে