পাতা:তরুণের স্বপ্ন - সুভাষচন্দ্র বসু.pdf/১২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পত্র
১১৯

ভালবাসিতে পারিতেন। আমি জিজ্ঞাসা করি, কয়জন হিন্দু নায়ক বুকে হাত দিয়া বলিতে পারেন তাঁহারা মুসলমানকে আদৌ ঘৃণা করেন না? কয়জন মুসলমান জননায়ক বুকে হাত দিয়া বলিতে পারেন তাঁহারা হিন্দুকে ঘৃণা করেন না? দেশবন্ধু ধর্ম্মমতহিসাবে বৈষ্ণব ছিলেন। কিন্তু তাঁহার বুকের মধ্যে সকল ধর্ম্মের লোকের স্থান ছিল। চুক্তিপত্রের দ্বারা বিবাদ ভঞ্জন হইলেও তিনি বিশ্বাস করিতেন না যে, শুধু তাহারই দ্বারা হিন্দু ও মুসলমানের মধ্যে প্রীতি ও ভালবাসা জাগরিত হইবে। তাই তিনি শিক্ষার (culture) দিক দিয়া হিন্দুধর্ম্ম ও ইসলামের মধ্যে মৈত্রী সংস্থাপনের চেষ্টা করিতেন। হিন্দু শিক্ষা ও ইসলামীয় শিক্ষার (culture) মধ্যে কোথায় মিল পাওয়া যায় এ বিষয়ে কারাগারে মৌলানা আক্রাম খাঁর সহিত তাঁহার প্রায়ই আলোচনা হইত। আমার যতদূর স্মরণ আছে হিন্দু-মুসলমানের “শিক্ষার মিলনের” বিষয়ে মৌলানা সাহেব পুস্তক বা প্রবন্ধ লিখিতে রাজী হইয়াছিলেন।

ভারতে স্বরাজের প্রতিষ্ঠা হইবে উচ্চ শ্রেণীর স্বার্থসিদ্ধির জন্য নয়, জনসাধারণের উপকার ও মঙ্গলের জন্য, এ-কথা যেরূপ দেশবন্ধু জোর গলায় প্রচার করিয়াছেন প্রথম শ্রেণীর আর কোন নেতা সেরূপ করিয়াছিলেন বলিয়া আমার মনে হয় না। “স্বরাজ জনসাধারণের জন্য” এ-কথা পৃথিবীতে নূতন নয়। ইউরোপে বহুকাল পূর্ব্বে ও মন্ত্র প্রচারিত হইয়াছিল কিন্তু ভারতের রাজনীতিক্ষেত্রে এ-কথা নূতন বটে। অবশ্য স্বামী বিবেকানন্দ তাঁর 'বর্ত্তমান ভারতে' প্রায় ত্রিশ বৎসর পূর্ব্বে একথা লিখিয়া গিয়াছেন কিন্তু স্বামীজির সে ভবিষ্যদ্বাণীর প্রতিধ্বনি রাজনীতির রঙ্গমঞ্চে শুনা যায় নাই।

তাঁহার কারামুক্তির পর হইতে দেহত্যাগ পর্য্যন্ত দেশবন্ধু যে সব কথা