পাতা:তিতাস একটি নদীর নাম.djvu/২৯৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
তিতাস একটি নদীর নাম
২৮৩

জাগিতে ক্লান্ত হইয়া এক সময় তার ঘুম আসিবে; রাত ফুরাইবে, কিন্তু ঘুম ভাঙ্গিবে না, সকাল হইবে, সূর্য উঠিবে, এ-পার ও-পার দুই পারের ছেলেমেয়ে নারী-পুরুষ কাতারে কাতারে দাঁড়াইয়া দেখিবে আর ভাবিবে অনন্ত বুঝি জলে পড়িয়া গিয়াছে। হায় হায় কি হইবে, অনন্ত জলে পড়িয়া গিয়াছে। আমার তখন ঘুম ভাঙ্গিবে, তাহদের দিকে চাহিয়া চোখ কচলাইয়া মৃদু হাসিয়া আমি তখন জলের উপর উঠিয়া বসিব, তারপর আস্তে আস্তে হাঁটিয়া তাহাদের পাশ কাটাইয়া দিনের কাজে চলিয়া যাইব।

 অনন্তর কল্পনার দৌড় দেখিয়া উদয়তারা হাসিয়া উঠিল, দেহে প্রাণ থাকিতে কেউ নদীর উপর শোয় না রে; প্রাণপাখী যখন উড়িয়া যায়, দেহখাঁচা তখন শূন্য, যারা পোড়াইতে পারে না, জলসই করিয়া ভাসাইয়া দেয়। এই জল-বিছানায় শুইবার মানুষ শুধু ত সে, তুই শুইতে যাবি কোন্ দুঃখে! তুই কি লখাই পণ্ডিত?

 ‘হ, আমি লখাই পণ্ডিত। মোটে একটা আখর শিখলাম না, আমি হইলাম পণ্ডিত।’

 আরে পড়া-লেখার পণ্ডিতের কথা কই না, কই সদাগরের ছেলের কথা। লখাই ছিল চান্দসদাগরের ছেলে। কালনাগের দংশনে মারা গিয়াছিল। তখন একটা কলাগাছের ভেলায় করিয়া তারে জলে ভাসাইয়া দিল, আর উজান ঠেলিয়া সেই ভেলা ভাসিয়া চলিল। তার বৌ ভেলইয়া সুন্দরী ধনুক হাতে লইয়া নদীর তীরে থাকিয়া ভেলার সঙ্গে সঙ্গে চলিল।