বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:তিতাস একটি নদীর নাম.djvu/৩৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
তিতাস একটি নদীর নাম
৩১৯

পারের সীমার বাহিরে সাপলাসালুকের দেশ, অনেক দূরে ধানক্ষেত পাটক্ষেত, তাহাও জলে ভাসিতেছে। নৌকাটি তিতাস পার হইয়া দূরের একখানা পল্লীর দিকে রোখ করিয়াছে। গলুইটা জলের সমান নিচু। সরু ও লম্বা পাছাটা পেটের পর হইতে উঁচু হইয়া গিয়া আকাশে ঠেকিয়াছে; হালের কাঠিটা তির্যকভাবে আকাশ ফুঁড়িবার মতলবে যেন উঁচাইয়া উঠিয়াছে। তাহাতে ধরিয়া একটা লোক নাচিতেছে আর পাটাতনে পদাঘাত করিতেছে। লোকটাকে একটা পাখির মত ছোট দেখাইতেছে। ডরার উপর দাঁড়াইয়া একদল লোক খোল করতাল বাজাইয়া সারি গাহিতেছে। আর তাহারই তালে তালে দুই পাশে শত শত বৈঠা উঠিতেছে নামিতেছে, জল ছিটাইয়া কুয়াসা সৃষ্টি করিতেছে।

 কিন্তু অনেকক্ষণ ধরিয়া দেখিতে পাওয়া গেল না। পল্লীর গাছপালা ঘরবাড়ির আড়ালে ঢাকা পড়িয়া গেল। ছেলেরা অনন্তকে সান্ত্বনা দিল, গাঁয়ের এই পাশ দিয়া আড়ালে পড়িয়াছে, ঐ-পাশ দিয়া নিশ্চয়ই বাহির হইবে।

 কিন্তু আর বাহির হইল না।

 কেন বাহির হইল না জিজ্ঞাসা করিতে ছেলেরা জানাইল, হয়ত ঐ-গাঁয়ের ঐ-পাশটিতে ওদের ঘরবাড়ি। নৌকা সাজাইয়া রঙ করাইয়া লোকজন লইয়া তালিম দিতে গিয়াছিল। পাঁচদিন পরেই বড় নৌকা-দৌড় কিনা। নাও কেমন চলে দেখিবার জন্য একপাক ঘুরিয়া আসিয়াছে। এখন ওদের ঘাটে নৌকা বাঁধিয়া যে-যার বাড়ি খাইতে চলিয়া গিয়াছে।