পাতা:তিতাস একটি নদীর নাম.djvu/৩৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৩৬
তিতাস একটি নদীর নাম

 মুহুরী যাইতে উদ্যত হইলে তাড়াতাড়ি কাদির দুইটা লাঠি বাহির করিল। মুহুরী হতভম্ব হইয়া গেল। কাদির একটা লাঠি নিজের হাতে লইল এবং বাকি লাঠিটা নাতি রমুর হাতে দিয়া বলিল, ‘নে শালা, তর্ দাদারে মার্।’

 রমু লাঠিটা হাতে লইয়া গো-বেচারার মত একবার কাদিরের মাথার দিকে আরেকবার মুহুরীর মাথার দিকে তাকাইতে লাগিল; কার মাথায় মারিবে বুঝি-বা ঠিক করিয়া উঠিতে পারিতেছিল না।


 সেইদিন বিকালবেলা, মাগন সরকার মামলা লাগাইয়া ব্রাহ্মণবাড়ীয়া হইতে বাড়ি ফিরিতেছিল। তিতাস-নদীর তীর ধরিয়া পথ। সূর্য এলাইয়া পড়িয়াছে। তিতাসের ঐ পারে মাঠ ময়দান ছাড়াইয়া অস্পষ্ট গ্রামের রেখা। তারই ওপারে সূর্য একটু পরেই অস্ত যাইবে। পশ্চিমাকাশ লাল হইয়া উঠিয়াছে। তার সেই লালিমা আবার মেঘের স্তরে স্তরে নানা রঙের পিচকারী ছুড়িয়া মারিতেছে। ঠাণ্ডা হাওয়া দিয়াছে। চারিদিকে শান্ত, সমাহিত ভাব। কাছেই বাড়িঘর। গাইগরু ধীরেসুস্থে আপন মনে বাড়িতে ফিরিতেছে। রাখালের তাড়া করার অপেক্ষা রাখিতেছে না। বামদিকে তটরেখা, ডানদিকে বেড়া। কি সব ক্ষেত লাগাইয়াছে, তারই জন্য বেড়া। গলায় ঝুলানো রেশমী চাদর হাওয়ায় উড়িয়া এক একবার বেড়ার কঞ্চিতে গিয়া লাগিতেছিল। পায়ের মসৃণ জুতায় লাগিতেছিল