বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:তিতাস একটি নদীর নাম.djvu/৩৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৪৪
তিতাস একটি নদীর নাম

 বাপ আচ্ছা এক মজার কাণ্ড শুরু করিয়া দিয়াছে। এ গাঁয়ে যা কোনদিন কেউ করে নাই, তেমনি এক কাণ্ড। রমু মনে মনে ভাবিতে লাগিল।

 তারপর একদিন দেখা গেল, তিতাসের পারে একখানা অস্থায়ী চালাঘর উঠিয়াছে। কয়েকদিন পরে সে-ঘরের বাসিন্দারাও ছোট ছোট কয়েকখানা কাঠের বাক্স মাথায় করিয়া হাজির হইল। তারা চারিজন ছুতার মিস্ত্রী। নাও গড়াইবার যাবতীয় হাতিয়ার লইয়া সে-ঘরে বসতি স্থাপন করিয়াছে।

 আগাপাছার ‘ছেউ’ ঠিক করিয়া যেদিন তাহারা নাও ‘টাঙ্গিল’, সেদিন রমুর বিস্ময়ের সীমা রহিল না। নৌকার মেরুদণ্ড মাত্র পত্তন করা হইয়াছে। সেই মেরুদণ্ডের ডগা আড় হইয়া আকাশ ঠেলিয়া কতখানি যে উপরে উঠিয়াছে, রমুর ক্ষুদ্র দৃষ্টি তার কি পরিমাপ করিবে! কিন্তু মিস্ত্রী দুইজন অত উঁচুতে গিয়া বসিয়াও কেমন হাতুড়ি পিটাইতেছে, আর পেরেক ঠুকিতেছে!

 মাপজোখ লইয়া এই মেরুদণ্ড ঠিক করিতে কয়েকদিন লাগিল। তারপর পূরাদমে শুরু হইল কাজ। এক একটা তক্তায় কাদা মাখাইয়া আগুনে পোড়াইয়া টানা দিয়া মোড়ন দিয়া বাঁকাইয়া, খাঁজ কাটিয়া জোড়া দেয়, আর পাতাম লোহার একদিক বসাইয়া আস্তে হাতুড়ির টোকা দেয়, একদিক সামান্য একটু বসিলে, আরেকদিক ঘুরাইয়া খাঁজের উপর বসাইয়া হাতুড়ি দিয়া পিটিতে থাকে—ডুম্ ডুম্—টাকুর টাকুর ডুম্‌!