পাতা:তিতাস একটি নদীর নাম.djvu/৪১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
তিতাস একটি নদীর নাম
৩৯৯

চলিতে পারে, ‘জীবন জুড়াব যেয়ে কার কাছে, দয়াল কৃষ্ণবিনে বন্ধু ভবে কে আছে।’ কারো কারো মনঃপুত না হওয়াতে বলিল, তবে এটা তুলিতে পার, ‘কি গো কালশশী, তোমার বাঁশি কেনে রাধা বলে, কৃষ্ণ বলে না। দুঃখিনী রাধারে হরি সঁপলা কার ঠাঁই। ব্রজগোপীর ঘরে ঘরে ঠাঁই মিলে না দাঁড়াইবার।’

 তার চেয়েও উত্তম গান মোহনের স্মরণেই ছিল। বলিল, তার আগে এই গানটা হোক, ‘এহি বৃন্দাবনে ব্রজগোপীগণে ঝুরিয়াছে দু’নয়ানে। পশুপক্ষী সবে কান্দিছে নীরবে হায় হায় কৃষ্ণবলে।’

 আজ কৃষ্ণের মথুরায় গমন। শূন্য বৃন্দাবন একসারে ক্রন্দন করিতেছে। পশুপাখী, গাভীবৎস, দ্বাদশবন, যমুনাপুলিন, চৌরাশি ক্রোশ ব্রজাঙ্গন একযোগে রোদন করিতেছে। ব্রজগোপীর চোখের জলে পথ পিছল। সেই পিছল পথে রথের চাকা কতবার বসিয়া গিয়াছে। ব্রজগোপী কতবার গাহিয়াছে, ‘প্রাণ মোরে নেওরে সঙ্গেতে, ব্রজনাথ রাখ রথ কালিন্দীর তটেতে।’ কিন্তু তবু তার যাত্রা থামে নাই। ব্রজগোপীর বুকজোড়া কামনা হৃদয়ছোঁয়া ভালবাসাকে দলিত মথিত করিয়া, তার বুকখানা দুমড়াইয়া গুঁড়াইয়া দিয়া তার রথ চলিয়া গিয়াছে। ব্রজগোপী সবদিক দিয়া আজ কাঙাল। তবু আশা ছাড়ে না। তবু বলে, ‘ম’লে নি গো পাব, এ প্রাণ জুড়াব, যায় যায় চিত্ত জ্বলে।’

 একটা বেদনা-বিধুর ভারাক্রান্ত পরিবেশের মধ্যে গানটা