বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:তিতাস একটি নদীর নাম.djvu/৪৩৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
তিতাস একটি নদীর নাম
৪২৭

গলা জড়াইয়া কাঁদিয়া ভাসাইল। বনমালী তার হাত ছাড়াইতে ছাড়াইতে বলিল, ‘পাগলামি করিস্ না। কথা রাখ। অখন বুঝি তর কান্দবার বয়স আছে!’

 উদয়তারা ফোঁপাইতে ফোঁপাইতে বলিল, ‘দাদা, তোমার মাথায় বুঝি আর শোলার মটুক উঠল না।’

 ‘শোলার মটুক উঠব। মড়াপোড়ার টেকে গিয় উঠব। তুই কান্দিস না।’

 বনমালীর সঙ্গে উদয়তারার এই শেষ দেখা।


 নদীতে নৌকা ভাসিলে উদয়তারা ছইয়ের ভিতর চুপ করিয়া বসিয়া রহিল। একটি কথাও বলিল না। একটানা কোরা টানিতে টানিতে তার স্বামী অধৈর্য হইয়া পড়িয়াছিল। আর থাকিতে না পারিয়া শেষে নিজেই কথা কহিল, ‘নিত্যর মামী, অ নিত্যর মামী, একটু তামুক নি খাওয়াইতে পারে।’

 তারা নদীবক্ষে একে অন্ত্যকে পাইয়াছে অনেকদিন পরে। কিন্তু উদয়তারার মনে কোনই উৎসাহ নাই। সে নির্লিপ্ত ভাবে কলকেতে তামাক ভরিল, মালসার আগুনে টিকা গুঁজিয়া দিল, লাল হইলে তুলিয়া হুকাটা ছইয়ের বাহিরে বাড়াইয়া দিয়া নিস্পৃহ কণ্ঠে বলিল, ‘নেউক, হুক্কা নেউক।’

 বনমালীর জন্য এক অব্যক্ত বেদনা তার মনে অনবরত লুটোপুটি খাইতেছে, তার স্বামী কোর টানিতেছে আর চারিদিক দেখিতেছে। দুই পারের চাষীদের গ্রামগুলি তেমনি সবুজ। কিন্তু মালোদের পাড়াগুলি যখনই চোখে পড়িতেছে,