পাতা:তিনসঙ্গী - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
রবিবার
২৩

তোমাদের আর্টিস্টের একটা কৌতুক আছে, কৌতুহল আছে। সুসম্পূর্ণ জিনিস তোমাদের কাছে picturesque নয়। থাক্‌গে এসব বৃথা তর্ক। আপাতত ক্রাইসলারের পালাটা যতদূর সম্ভব এগিয়ে দেওয়া যাক।”

 এই বলে চৌকি ছেড়ে বিভা পাশের ঘরে চলে গেল। ফিরে এসে অভীকের হাতে একতাড়া নোট দিয়ে বললে, “এই নাও তোমার ইন্‌স্পিরেশন, কোম্পানি-বাহাদুরের মার্কামারা। কিন্তু তাই বলে তোমার ঐ ঘড়ি আমাকে নিতে বোলো না।”

 চৌকিতে মাথা রেখে অভীক মেঝের উপরে বসে রইল। বিভা দ্রুতপদে তার হাত টেনে নিয়ে বললে, “আমাকে ভুল বুঝে না। তোমার অভাব ঘটেছে। আমার অভাব নেই এমন সুযোগে—”

 বিভাকে থামিয়ে দিয়ে অভীক বললে, “অভাব আছে আমার, দারুণ অভাব। তোমার হাতেই রয়েছে সুযোগ, তা পূরণ করবার। কী হবে টাকায়।”

 বিভা অভীকের হাতের উপরে স্নিগ্ধভাবে হাত বুলোতে বুলোতে বললে, “যা পারি নে তার দুঃখ রইল আমার মনে চিরদিন। যতটুকু পারি তার সুখ থেকে কেন আমাকে বঞ্চিত করবে।”

 “না না না, কিছুতেই না। তোমারই কাছ থেকে সাহায্য নিয়ে শীলাকে আমি গাড়ি চড়িয়ে বেড়াব? এ প্রস্তাবে ধিক্কার দেবে এই ভেবেছিলুম, রাগ করবে এই ছিল আশা।”

 “রাগ করব কেন। তোমার দুষ্টুমি কতক্ষণের। এটা সাংঘাতিক শীলার পক্ষে, তোমার পক্ষে একটুও না। এমন ছেলেমানুষি কতবার তোমার দেখেছি, মনে মনে হেসেছি। জানি কিছুদিনের মতো এ খেলা না হলে তোমার চলে না। এও জানি স্থায়ী হলে আরো আচল হয়। হয়তো তুমি কিছু পেতে চাও, কিন্তু তোমাকে কিছু পাবে এ সইতে পারো না।”

 “বী, আমাকে তুমি অত্যন্ত বেশি জানো তাই এমন ঘোরতর