তৃণান্ধুর Σ ο Θ প্রায়ই বিকেলে কুঠার মাঠে বেড়াতে যাই, এবার একটা নতুন পথ খুলেচে মাঠের মধ্যে দিয়ে, সেটা আরও অপূর্ব। এমন সবুজ মাঠ, উলুফুল ফুটচে চারি ধারে, শিমূল গাছ হাত বেঁকিয়ে আছে, দূর বানান্ত শীর্ষে বিরাটকায় Lyre পাখীর পুচ্ছের মত বাশবনের মাথা দুলচে, এমন শ্যামলতা, এমন শ্ৰী-এ আমাদের এই দেশটা ছাড়া আর কোথাও নেই। দুপুরে আজ বেজায় গরম, কাল রাতে ভাল ঘুম হয়নি বলে অত গরমেও খুব ঘুমুলাম। উঠে দেখি মেঘ করেচে। উত্তর পশ্চিম কোণে ঘন নীল-কৃষ্ণ কালবৈশাখীর মেঘ,-তারপর উঠল। বেজায় বড়। আমি আর ঘরে থাকতে পারলাম না, একখানা গামছা নিয়ে তখনি নদীর ঘাটে চলে গেলাম। পথে জেলি বল্পে শীগগির নেকে তলায় যান, ভয়ানক আম পড়চে । কিন্তু আজ আর আম কুড়োবার দিকে আমার খেয়াল নেই। আমি নদীর ধারে কালবৈশাখীর লীলা দেখতে চাই। নদীজলে নামবার আগেই বৃষ্টি এল। বড় বড় ফোটায় বৃষ্টি পড়তে লাগল-জলে নেমে দেখি জল গরম, যেন ফুটুচে। এপার ওপার সাতার দিতে লাগলাম, কালো জলে ঢেউ উঠেচে, মুখে নাকে মাথায় ঢেউ ভেঙে পড়চে, ওপারের চরের ওপর বিদ্যুৎ চমকাচ্চে, বন্যে বুড়ো গাছ ঝড়ে উন্টে উন্টে যাচ্চে, বৃষ্টির ধোয়ায় চারিধার অন্ধকার হয়ে গেল, নদীজলের অপূর্ব স্বভ্রাণ বেরুচ্চে, দূর দূর সমুদ্রের কথা মনে হচ্চে,। এমনি কত ঝটিকাময় অপরাহু ও নীরন্ধ, অন্ধকারময়ী রাত্রির কথা-প্ৰকৃতির মধ্যে এমনি মিশে হাত ধরাধরি করে চলাঐ শ্যামল ডালপালা ওঠা শিমূল গাছ, সাইবাবরল গাছ—এই তো আমি চাই। এদের সঙ্গে জীবন উপভোগ করবো-ঐ ঝোড়ো-মেঘে আমার ভগবানের উপাসনা, ঐ তীক্ষা নীল বিদ্যুতে, এই কালো নদীজলের ঢেউয়ে, ঝড়ের গন্ধে, বাতাসের গন্ধে, বৃষ্টি-ভেজা মাটীর গন্ধে, চরের ঘাসের কঁাচা গন্ধে । কাল কুঠার মাঠে বসে এই সব কথা ভাবছিলাম। তারপর নদীজলে নাইতে নেমে কেমন একটা ভক্তির ভাব মনে এল । সমস্ত দেহ মন যেন আপনা। আপনি নুইয়ে পড়তে চাইল । এ ধরণের ভক্তি একটা বড় bliss, জীবনে হঠাৎ আসে না । যখন আসে, তখন বিরাট রূপেই আসে, আনন্দের বন্যা নিয়ে আসে প্ৰাণের তীরে। এ Realisation যেমন দুল্লািভ, তেমনি অপূর্ব।
পাতা:তৃণাঙ্কুর - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১০৯
অবয়ব