Sybr छ्लांडूव्र ধীরে উঠে বঁাশবনের পথ দিয়ে বাড়ী চলে এলাম। আজ দুপুরে কুঠার মাঠে বেড়াতে গিয়ে আমার সেই পুরোনো জায়গায় বসলাম-সেই সেখান থেকে কুঠার দেবদারু গাছটা দেখা যায়-কি অপরূপ শোভা যে হয়েচে সেখানে ফুটন্ত ধুৱফুলের, তা না দেখলে শুধু লিখে বোঝানো যাবে না। এই যে আমি লিখচি, আমারই মনে থাকবে না। অনেক দিন পরে,-ওই ছবিটা অস্পষ্ট হয়ে যাবে মনের মধ্যে। এরকম হয় আমি জানি-তবুও আজই দেখোঁচি, তাই নবীন অনুভূতির স্পৰ্দ্ধায় জোর ক’রে বলচি বনফুলের শোভার এ প্ৰাচুৰ্য্য আমি দেখিনি। বিহারে নেই, সিং ভূমে নেই, নাগপুরে নেই-এই বাংলা দেশের Sub tropical বনজঙ্গল ছাড়া গাছপালার এই ভঙ্গি ও ফুলের এই প্ৰাচুৰ্য্য কোথাও সম্ভব নয়। কেন যে লোকে ছুটে যায় বম্বে, দিল্লী, কাশী, দেওঘর তা বলা কঠিন। বাংলা দেশের এই নিভৃত পল্লী প্ৰান্তের সৌন্দৰ্য্য তারা কখনো দেখেনি-তাই । আজ বিকেলে টুনি, কাতু, জগো, বুধে এদের সঙ্গে কুঠার মাঠে বেড়াতে গিয়ে বনবোপের ধারে টলটা পেতে পেতে বসলাম। রোদ ক্রমে রাঙা হয়ে গেল-একটা ফুল-ফোটা ঝোপের পারে কতক্ষণ বসে রইলাম। তারপর একটা নরম কচি ঘাসে-ভরা জলার ধারে মুক্ত সান্ধ্য হাওয়ায় ছেলেমেয়েদের সঙ্গে ছুটোছুটি খেলা করলুম কতক্ষণ— আমি এই সবই ভালবাসি, সাধে কি কলকাতা বিষ লাগে ! এই শীতকালের সন্ধ্যায় এতক্ষণ ধোয়ায় সারা কলকাতা শহর ভরে গিয়েচে- আর এখানে কত ডাহুক, জলপিপি, দোয়েল, শালিকের আনন্দ কাকলী, কত ফুটন্ত বনফুলের মেলা, কি নিৰ্ম্মল শীতের সন্ধ্যার বাতাস, কি রঙীন অস্তদিগন্তের রূপ, শিরীষ গাছে কঁাচা সুটি ঝুলচে, তিত্তিরাজ গাছে কঁচা ফলের থোলো দুলচে, জলার ধারে ধারে নীল কলমী ফুল ফুটেচে। মটর শাক, কচি খেসারি শাকের শ্যাম সৌন্দৰ্য্য—এই আকাশ, এই মাঠ, বন, এই সন্ধ্যায়-ওঠা প্ৰথম তারাটী-জীবনে এরা আমার প্রিয়, এদেরই ভালবাসি, এদেরই আবাল্য আমার অতি পরিচিত সার্থী—এদের হারিয়ে ফেলেই তো যত কষ্ট পাই । বিকেলে আজ বেলেডাঙার মরগাঙের আগাড়ে একটা নিরিবিলি জায়গায় এক বোঝা পাকাটির ওপর গিয়ে বসে ওবেলার সেই কথাটা চিন্তা করছিলাম
পাতা:তৃণাঙ্কুর - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১২৪
অবয়ব