SRR তৃণান্ধুর এ ক'দিন ছিলাম। কলকাতায়। ওরিয়েণ্টাল সোসাইটির প্রদর্শণীতে এবার নন্দলাল বসুর দু’খনি বড় সুন্দর ছবি দেখে অত্যন্ত আনন্দ পেয়েছি। খুকু ও জাহ্নবীর মেয়ে খুকী সঙ্গে ছিল—তারাও দেখেছে, তবে নন্দবাবুর ছবির তারা আর কি বুঝবে ? ওদের দেখালুম বায়োস্কোপ, জু, সার্কাস-আর এখানে ওখানে নিয়ে বেড়ালুম। একদিন সজনীদাসের বাড়ী, একদিন নীরদের বাড়ী, একদিন নীরদ দাসগুপ্তের ওখানে। দুঃখ হোল যে এখানে এসময়ে সুপ্ৰভা নেই । কাল নৌকায় বনগা থেকে এলাম। কি অদ্ভুত রূপ দেখলাম সন্ধ্যায় নদীর । শীতও খুব । অন্ধকার হয়ে গেল। কলকাতার হৈচৈ-এর পরে এই শান্ত সন্ধ্যা, ফুল-ফোটা বন, মাঠ, কালো নিথর নদী জল মনের সমস্ত ংকীর্ণ অবসাদ দূর করে দিয়েচে । চালিতেপোতার বঁাকে বনের মাথার প্রথম একটা তারা উঠেচে—কতদূরের দেশের সংবাদ আলোর পাখায় বহন করে আনচে আমাদের এই ক্ষুদ্র, গ্ৰাম্যনদীর চরে- আমার মনের নিভৃত কোণে । ঘাটে যখন নাম লুম, তখন খুব অন্ধকার হয়ে গিয়েচে । খুকু ও আমি জিনিসপত্র নিয়ে বঁাশবনের অন্ধকারে ভয়ে ভয়ে বাড়ী এলুম, খুকু তো একবার ভয়ে চীৎকার করে উঠল কি দেখে ।। ভয়ের কারণ এই যে এসময়ে আমাদের দেশে বাঘের ভয় হয় । দুপুরে কুঠীর মাঠে বেড়াতে গিয়ে কুঠার এদিকে বনের মধ্যে সেই যে টিবিটা আছে, সেখানে খানিকটা বসলাম--তারই পরে একটা নাবাল জমি, আর ওপারে সেই বটগাছটা। আকাশ কি অদ্ভুত নীল ! ছোট এড়াঞ্চির ফুল এখনও ঠিক সেই রকমই আছে—ক’দিন আগে যা দেখে গিয়েচি, সে সৌন্দৰ্য্য এখনও স্নান হয়নি। প্ৰায় পনেরো দিন ধরে এর সৌন্দৰ্য্য সমান ভাবে রয়েচে, এতটুকু ক্ষুন্ন হয়নি এ বন্ড আশ্চর্য্যের কথা। এমন কোনো বনের ফুলের কথা আমার জানা নেই, যা ফুটন্ত অবস্থায় এতদিন থাকে। বাল জ্যাকের গল্পটা ( Atheists' Mass ) তখনই পড়ে সবে বেড়াতে গিয়েচি। আকাশ যেন আরও নীল দেখাচ্ছিল, বনফুল-ফোটা ঝোপ আরও অপরূপ দেখাচ্ছিল। নাইতে গিয়ে বঁাশতলার ঘাট পৰ্য্যন্ত সাতার দিয়ে এলাম । বিকেলে ক্যাম্প-টুলটা নিয়ে গিয়ে কুঠার সেই ঢিবিটাতেই অনেকক্ষণ বসে রইলুম— রোদ রাঙা হয়ে গেল, ওপারের। শিমুলগাছটায় মাথার ওপর
পাতা:তৃণাঙ্কুর - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১২৮
অবয়ব