পাতা:তৃণাঙ্কুর - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৭৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ङ्ांकूनि ዓ S আনন্দই পেয়েচি ! --সেই ভিটে, সেই গ্ৰাম আজও তেমনি আছে- আমিই কেবল বদলে গিয়েচি। আজ রবিবার ফণিকাকার তাড়াতাড়ি করচে এত রাত্রে হরি রায়ের বাড়ীতে তাস খেলতে যাবে বলে-ঝিন্টুকীপোতায় বাওড়ে বড় রুই মাছের বাচ হচ্চে বলে-হাটে আজ মাছ সন্তা হয়েচে বলে-আমিও যদি গ্রামে থাকতুম—আমিও ও থেকে আনন্দ পেতুম ওদেরই মতন-কিন্তু আমি বদলে গিয়েচি একেবারেই । Sophisticated হয়ে পড়েচি, hampered হচ্চি। দৃষ্টির স্বচ্ছতা নষ্ট হয় নি বলে এখনও এ সব বুঝতে পারি। অগণ্য আকাশের তারায় তারায় কত দেবলোক, কত পৃথিবী, কত জগৎ- কত অগণিত প্ৰাণীকুল, কত দেবশিশু-আনন্দের কি মহান, অসীম ভাণ্ডার । দুঃখও যত বৃহৎ তাদের-আনন্দও তত বৃহৎ । এই ভেবেই, চৈতন্যের এ প্রসারিতা শুধু আমার আজ রাত্রে। আজ সকালে উঠতে দেরী হয়ে গিয়েছিল, কারণ কাল অনেক রাত্রে দমদম থেকে ফিরোচি। সেখানেই রাত্রে খেলাম, আগামী রবিবারের Outing এর নক্সা করলাম, তারপর আমি আর নীরদবাবু মোটরে ফিরি। আজ এইমাত্র সাহেবের ওখান থেকে আসচি। সাহেব একটু দমে গিয়েচে- “ আমি ফণিবাবুব সঙ্গে ওটা মিটিয়ে ফেলতে বলুম। কনভেণ্ট রোডটা অন্ধকার, এখানে ওখানে যুই ও মালতীর সুগন্ধ, আজ আকাশ বেশ পরিষ্কার, নক্ষত্রে ভরা। ভগবানের কাছে প্রার্থনা কলুমি, সাহেবের হাঙ্গামাটা যেন মিটে যায়। একটা কথা মনে হচ্চে। মানুষের মনের ব্যাপকতা যত বাড়বে ততই সে । পূর্ণ মনুষ্যত্বকে লাভ করবে। এমন সব মানুষ জীবনে কতই দেখলাম তাদের মনের সতর্কতা, চৈতন্যের ব্যাপকতা বড়ই কম। এত কম যে আহার বিস্কার; ও অর্থেপাৰ্জনের বাইরে যে আর কিছু আছে, তা তারা ভাবতে পারে না। জ্ঞান বল, বিজ্ঞান বল, আর্ট বল, সাহিত্য বল—এ সবের কোনাে মূল্য নেই! তাদের কাছে। এমন কি স্নেহ, প্ৰেম, কল্পনা বন্ধুত্ব, এ সবও তাদের অজ্ঞাত-loyalty-কে তারা ভীরুতা ভাবে, স্নেহকে দুর্বলতা ভাবে। ফণিবাবু একজন এই ধরণের মানুষ। এ সব লোকের নির্ববুদ্ধিতা আমি বরদাস্ত । কৰ্ত্তে পারিনে একেবারেই। মূর্থিতারও একটা সীমা আছে, এদের তাও নেই।