তৃণান্ধুর SVS) খুব চওড়া পাথরে বাধানো-কিন্তু উঠেই চলেচি, সিঁড়ি আর শেষ হয় না। প্ৰথমে একটা দরজা, সেটা এমন ভাবে তৈরী যে দেখলে প্ৰাচীন আমলের দুৰ্গদ্বার বলে ভ্ৰম হয়। তারপর আর একটা দরজা, তারপর আর একটা-সর্বশেষে মন্দির। মন্দিরে প্রবেশ করে বহিরাঙ্গণের প্রাচীরের ওপরকার একটা চবুতারায় আমরা বসলাম । নীচেই বা ধারে কিন্যাসী হ্রদ, পূবে পূৰ্ণচন্দ্র উঠচে, চারিধারে থৈ থৈ করচে বিরাট space, পশ্চিম আকাশ এখনও একটু রঙীন। মন্দিরে আরতির সময়ে এখানে নহবৎ বাজে, এক ছোকরা বাইরে পাচীল ঠেস দিয়ে বসে সানাই বাজাতে শুরু করলে। আমি একটা সিগারেট ধরালাম । একটু পরে জ্যোৎস্না আরও ফুটুল। আমাদের আর উঠতে ইচ্ছে করে না, প্ৰমোদবাবু তো শুয়েই পড়েচোন। দূরে পাহাড়ের নীচে আম্বারা গ্রামের পুকুরটাতে জ্যোৎস্না পড়ে চিক চিক করচে। মন্দির দেখতে গেলাম। খুব ভারী ভারী গড়নের পাথরের (চৗকাঠ, দরজার ফ্ৰেম-সেকেলে ভারী দরজা, পেতলের পাত দিয়ে মোড়া, মোটা গুল বসানো । মন্দিরের দুপাশে ছোট ছোট ঘর, পরিচারক ও পূজারীরা বাস করে। তাদের ছেলেমেয়েরা খেলাধুলো করচে, মেয়ের রান্নাবাড়া করচে । রামসীতার মন্দিরের দরজার পাশে অনেকগুলি সেকেলে বন্দুক ও তলোয়ার আছে। একজনকে বল্লুম-এত বন্দুক কার ? সে বল্লে-ভোঁসলে সরকারক। ১৭৮৩ সালে রঘুজী ভেঁাসলা এই বৰ্ত্তমান মন্দির তৈরী করেন। আম্বারা সরোবরের পাশে ভেঁাসলাদের বিশ্রামাবাসের ধ্বংসাবশেষ আছে, আসবার সময় দেখি এসেচি। মন্দিরের পিছনের একটা চকুতারায় দাড়িয়ে উঠে নীচে রামটেক গ্রামের দৃশ্য দেখলামবড় সুন্দর দেখায়। রামটেক ঠিক গ্ৰাম নয়, একটা ছোট গোছের টাউন। মন্দির। প্ৰদক্ষিণের পর পাহাড় ও জঙ্গলের পথে আমরা নেমে এলাম। জ্যোৎস্নার আলোছায়ায় বনময় সানুদেশ ও পাষাণ বাধানো পথটা কি অদ্ভুত হয়েচে । এখানে বসে কোনো ভাল বই পড়বার কি চিন্তা করবার উপযুক্ত স্থান। এর চারিধারেই অপ্রত্যাশিত সৌন্দৰ্য্যময় গলিঘুজি, উচ্চাবচ ভূমি, ছায়াভিরা বানান্ত দেশ। আমার পক্ষে তো একেবারে স্বৰ্গ। ঠিক এই ধরণের স্থানের সন্ধানই আমি মনে মনে করেছি। অনেকদিন ধরে। চন্দ্রনাথ পাহাড়ের থেকে এর সৌন্দৰ্য্য অনেক বেশী, যদিও চন্দ্রনাথের মত এ পাহাড় অতটা উচু নয়। আম্বারা গ্রামটী আমার বড় ভাল লাগল-চারিধারে একেবারে
পাতা:তৃণাঙ্কুর - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৯৯
অবয়ব