পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/৩২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

“ওন্ধুর! দেখ, ভাই! আমার পুত্রকন্যা কিছুই নাই। পৃথিবীতে তোমা ভিন্ন স্নেহের বস্তু আমার আর কেহ নাই। পৈতৃক যাহা কিছু আছে, সে সমুদয় তোমার। তাহার পর, আমার শ্বশুরের যে সম্পত্তি আমার স্ত্রী পাইয়াছে, তাহাও পরে তোমার হইবে। পৈতৃক সম্পত্তির হিসােব এই মুহূৰ্ত্তে আমি তোমাকে কড়ায়-গণ্ডায় দিতে পারি। কিন্তু ভাই! পাছে তুমি টাকা অপব্যয় কর ও পৈতৃক সম্পত্তি নষ্ট কর, সেজন্য এক্ষণে হিসাব দিতে আমি আপত্তি করিতেছি। তুমি বিবাহ করা। তোমার দুই-একটি পুত্ৰ-কন্যা হউক। তখন সমুদয় হিসােব তোমাকে আমি বুঝাইয়া দিব।” বলা বাহুল্য যে, আমার সেরূপ কথায় ওকুর সন্তুষ্ট হইল না। আমার নামে সে নালিশ করিবে, এইরূপ ভয় দেখাইয়া তখন সে বাটী হইতে চলিয়া গেল। দুই-চারি দিন সে আর বাটী আসিল না। একদিন দুইপ্রহরের সময় তাহার কতকগুলি বন্ধুর সহিত সে বাটীতে আসিয়া উপস্থিত হইল। তাহার বন্ধুগণকে সঙ্গে লইয়া সে বাটীর ভিতর প্রবেশ করিল ও আমার প্রতি নানারূপ কটু বাক্য প্রয়োগ করিয়া সে বলিল,- “অন্য সম্পত্তি বিভাগের নিমিত্ত পরে আমি আদালতে নালিশ করিব। কিন্তু আমার অংশের যে নগদ টাকা তোমার নিকট আছে, তাহা এই মুহূৰ্ত্তে তোমাকে দিতে হইবে। তাহা না দিলে তোমাকে আমি অপমান করিব।” সেই মুহূৰ্ত্তে আমি তাহার টাকা ফেলিয়া দিলাম। পিতার মৃত্যুর দিন হইতে হিসাবপত্রও তাহাকে আমি দেখাইতে চাহিলাম। কিন্তু হিসাবের প্রতি সে কটাক্ষও করিল না। অনেকগুলি নগদ টাকা হাতে পাইয়া বন্ধুদিগের সহিত তৎক্ষণাৎ সে প্রস্থান করিল। সেইদিন আমি আমার গৃহিণীকে বাঁকুড়া জিলায় তাহার পিত্ৰালয়ে আমার শাশুড়ী ণীর নিকট পাঠাইয়া দিলাম। ইহার পর তিন-চারি মাস কনিষ্ঠের আর দেখা লোকপরম্পরায় শুনিলাম যে, টাকা পাইয়া দুই-চারি জন বন্ধুকে সঙ্গে লইয়া সে গমন করিয়াছে। একদিন আমি নিকটস্থ একখানি গ্রামে খাজনা আদায় করিতে গিয়াছিলাম। বাটী মানুষের অতি মৃদু কাতর স্বর আমার র প্রবেশ করিল। সেই কাতর স্বর অনুসরণ করিয়া নিকটে গিয়া আমি দেখিলাম যে, মাঠের মাঝখানে এক গাছতলায় একটি লোক পড়িয়া আছে। আমি নিকটে গিয়া উপস্থিত হইলে সে আমার নিকট একটু জল প্রার্থনা করিল। কিছুদূরে একটি পুষ্করিণী ছিল। পুষ্করিণীতে আমার চাদর ভিজাইয়া সেই জল আনিয়া আমি তাহাকে পান করাইলাম। লোকটির কথায় বুঝিতে পারিলাম যে, সে পশ্চিমদেশীয় খোট্টা । কিঞ্চিৎ সুস্থ হইলে সে আমাকে বলিল যে,- “তাহার নিবাস জৌনপুর জিলা। পত্নীর সহিত পদব্ৰজে সে জগন্নাথ গিয়াছিল। সে স্থান হইতে সে দেশে প্রত্যাগমন করিতেছিল। পথে বিসূচিকা রোগ দ্বারা আক্রান্ত হইয়া তাহার পত্নীর পরলোক হয়। জগন্নাথেই তাঁহাদের টাকা ফুরাইয়া গিয়াছিল। ভিক্ষা করিয়া অতিকষ্টে তাহারা পথ পৰ্যটন করিতেছিল। সে পথে সচরাচর যাত্রী গমনাগমন করে, সে পথে লোকে বড় ভিক্ষা প্ৰদান করে না। সেজন্য সে এই গ্ৰাম্য-পথ অবলম্বন করিয়াছিল। সেইদিন প্রাতঃকালে এই মাঠ দিয়া যাইতে যাইতে সে-ও সহসা বিসূচিকা রোগগ্ৰস্ত হইয়াছে। চলিবার শক্তি তাহার নাই। পিপাসায় তাহার ছাতি ফাটিয়া যাইতেছে।” বিদেশী লোকটির জন্য আমার মনে অতিশয় দুঃখ হইল। আমি দেখিলাম যে, রোগে তাহার মৃত্যু না হউক, মাঠের মাঝখানে জীয়ন্ত অবস্থাতেই সেই রাত্রিতে তাহাকে শৃগালকুকুরে ছিড়িয়া খাইবে। তাহার পর সেই অনাথা নিঃসহায় ব্যক্তি পিপাসায় একটু জলের জন্য কতই না যন্ত্রণা ভোগ করিবে! সে অবস্থায় আমি তাহাকে ফেলিয়া যাইতে পারিলাম না। মুক্তা-মালা sNAls viði (SS BS! ro www.amarboi.com ro goS6ሉ