পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/৪৩৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চতুৰ্থ অধ্যায় থি-বী, যু-দে প্ৰাতঃকালে একজন রাখাল-বালক গৌরীশঙ্করবাবুকে এই অবস্থায় প্রথম দেখিতে পাইল । তাহার চীৎকারে চারিদিক হইতে লোক আসিয়া পড়িল। নিকটে সেই চণ্ডালের শিব ও পূজার আয়োজন দেখিয়া সকলে বুঝিতে পারিল যে, কি কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটিয়াছে। গৌরীশঙ্করবাবুকে ধরাধরি করিয়া সকলে গৃহে লইয়া গেল। প্রথম ডাক্তার— বৈদ্য আসিয়া তাহার চেতনা-সম্পাদনের নিমিত্ত চেষ্টা করিতে লাগিলেন। কিন্তু কিছুতেই কেহ তাঁহাকে চেতন করিতে পারিল না । যদি বা যৎসামান্যভাবে তাঁহার দেহে একটু জ্ঞানের উদয় হয়, কিন্তু প্রতিদিন রাত্রি তিনটার সময় গৌরীশঙ্করের পৃষ্ঠদেশে গুপৃগাপূ শব্দ হয়। কিরূপে তাঁহার পৃষ্ঠে এরূপ শব্দ হয়, তাহা কেহ দেখিতে পায় না; কিন্তু কে যেন সবলে তাঁহার পৃষ্ঠে কিল মারিতেছে, এইরূপ বােধ হয়। সেই সময় প্ৰহারের চোটে যন্ত্রণায় গৌরীশঙ্করের মুখ বিবর্ণ হইয়া পড়ে। দিনের বেলা শরীরে যাহা একটু বলের সঞ্চার ও মনে যাহা একটু জ্ঞানের উদয় হয়, সেই প্ৰহারের চোটে তাহা লোপ পাইয়া যায়। তাহার পর গৌরীশঙ্কর পুনরায় জড়ের মত পড়িয়া থাকেন। ফলকথা, ডাক্তার ও বৈদ্য দ্বারা কোনরূপ উপকার হইল না । একমাত্র পুত্রের এইরূপ অবস্থা দেখিয়া, র দুঃখের আর সীমা রহিল না। তিনি রাত্ৰি-দিন কাঁদিতে লাগিলেন। আহারনিদ্রা করিয়া, পুত্রের সেবা-শুশ্রুষা করিতে লাগিলেন। রোজার কথা শুনিলেই, দৌড়িয়া তিনি তীহার নিকট গমন করেন; নানারূপ মিনতি করিয়া তাহাকে ডাকিয়া আনেন। প্রতি রাত্ৰিত্যুেরোজাগণ নানারূপ ঝাড়ান করিতে লাগিল। দিনের বেলা একটু উপশম হয়। এক আধবৃন্দ্ৰচক্ষু উমীলিত করিয়া, গৌরীশঙ্কর বিস্ময়াপন্ন মুখে চারিদিকে দৃষ্টিপাত করেন। কিন্তু দিনের বেলা যাহা একটু উপকার হয়, রাত্রি তিনটার সময় ভূতের কিলের চােটে সে উপকার লোপ প্রাপ্ত হয়। রাত্রি তিনটার সময় প্রায় আধঘণ্টা ধরিয়া ভূতে তাঁহার পিঠে গুপ্ত-গাপ্ত গুপূ-গাপ্ত কিল মারে। আধঘণ্টা পরে কিলের শব্দ থামিয়া যায়। গৌরীশঙ্কর তাহার পর অনেকক্ষণ পৰ্যন্ত গো-গো শব্দ করিতে থাকেন ও সেই সময় তাহার মুখ হইতে রক্তমিশ্ৰিত ফেনা নিৰ্গত হইতে থাকে। তাঁহার পিঠে কোন স্থানে কৃষ্ণবর্ণ— কোন স্থানে রক্তবর্ণ-কিলের দাগও সকলে দেখিতে পায়; কিন্তু কে যে আসিয়া কিল মারিয়া যায়, কেহ তাহা দেখিতে পায় না। এইরূপে এগার দিন কাটিয়া গেল। এখনও গৌরীশঙ্করের চেতনা হইল না; এখনও প্রতি রাত্ৰিতে ভূতের প্রহার নিবারিত হইল না। শব-সাধনের একাদশ দিন পরে গৌরীশঙ্করের মাতা শুনিলেন যে, যে চণ্ডালের শিব লইয়া গৌরীশঙ্কর সাধনা করিতেছিলেন, তাহার পিতৃব্য ভূতের মন্ত্র অবগত আছে। গৌরীশঙ্করের মাতা তাহার নিকট গমন করিলেন। প্রথমে সে কিছুতেই আসিতে স্বীকার পাইল না। কারণ, তাহার ভ্রাতুষ্পপুত্রের দেহ লইয়া গৌরীশঙ্কর সেই বিড়ম্বনা করিয়াছিলেন। কিন্তু অনেক মিনতির পর, সে আসিয়া ঝাড়ান-কাঁড়ান করিতে লাগিল। তাহার মন্ত্রের বলে সামান্য একটু উপকার হইল। গৌরীশঙ্কর এবার চাহিয়া দেখিলেন। “থি-বী, যু-দে” এই শব্দ দুইটি কয়বার তিনি উচ্চারণ করিলেন। চণ্ডালের মন্ত্রে আর অধিক উপকার হইল না । গৌরীশঙ্করের জ্ঞান হইল না, রাত্রিকালে ভূতের প্রহার নিবারিত হইল না। আরও অনেক রোজা আসিয়া চিকিৎসা করিল; কিন্তু তাঁহাদের 8Str দুনিয়ার পাঠক এক হও! ~ www.amarboicon: "*