পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/৭৯৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্রবিষ্ট হইবামাত্ৰ ছালটা সজীব হইল। গা ঝাড়া দিয়া আমি উঠিয়া দাঁড়াইলাম। গাছ হইতে লাঙ্গুলটি সরাইয়া লইলাম। পাছে ফের পাক দেয়! তাহার পর দুই একবার আস্ফালন করিলাম। পূৰ্ব্বে তো অবাক হইয়াছিল, তাহা অপেক্ষা এখন দশগুণ অবাক হইয়া ফকীর ও কাঠুরিয়াগণ দৌড়িয়া নীেকায় গিয়া উঠিল। তাড়াতাড়ি নীেকা নদীর মাঝখানে লইয়া দ্রুতবেগে ভাটার স্রোতে তাহারা পলায়ন করিল। এখন এই নৃতন শরীরের প্রতি একবার আমি চাহিয়া দেখিলাম। এখন আমি সুন্দরবনের কেঁদোবাঘ হইয়াছি—সেই যারে বলে রয়াল টাইগার। ভাবিলাম যে,-এ মন্দ কথা নয়, এখন যাই, এই শরীরে বিবাহ-আসরে গিয়া উপস্থিত হই। এখন দেখি, সন্ন্যাসী বেটা কেমন করিয়া আমার কন্যাকে বিবাহ করে। এইরূপ স্থির করিয়া আমি দীেড়িলাম! কখন নিবিড় বনের ভিতর দিয়া চলিলাম, কখন লোকের আবাদের ধার দিয়া চলিলাম। সীতার দিয়া অথবা লম্প দিয়া শত শত নদী-নালা পার হইলাম। যে গ্রামে কন্যার বাড়ী সন্ধ্যার সময় তাহার এক ক্রোশ দূরে গিয়া পৌছিলাম। দূর হইতে আলো দেখিয়া ও বাজনা-বাদ্যের শব্দ শুনিয়া বুঝিলাম যে, ঐ বর আসিতেছে। সেই দিকে দ্রুতবেগে ধাবিত হইলাম। আলুম করিয়া এক লাফ দিয়া প্ৰথম বাদ্যকরদিগের ভিতর পড়িলাম, কালো কালো বিলাতী সাহেবেরা কোট-পেন্ট পিন্ধে যাহারা বিলাতী বাজনা বাজাইতেছিল, তাহারা আমার সেই মেঘগৰ্জ্জনের ন্যায় আলুম শব্দ শুনিয়া আর আমার সেই রুদ্রমূৰ্ত্তি দেখিয়া আপন আপন যন্ত্র ফেলিয়া যে যেদিকে পারিল পলায়ন করিল। ঢাকী ঢুলীদের ত কথাই নাই। তাঁহাদের কেহ পলাইল কেহ কেহ সেই স্থানে মূৰ্ছিত হইয়া পড়িল। যাহারা আলো প্রভৃতি লইয়া চলিয়াছিল, সকলে পলায়ন করিল। তাহার পর পুনরায় আলুম করিয়া আমি বরযাত্রদিগের গাড়ীর নিকট উপস্থিত হইলাম। টপ টপ করিয়া তাহারা গাড়ী হইতে লাফাইয়া পড়িল ও যে পারিল পলায়ন করিল। লম্বোদর বলিলেন,- “আমিও শ্ৰী গিয়াছিলাম। আমি একটি গাছে গিয়া উঠিয়াছিলাম।” শঙ্কর ঘোষ বলিলেন, — “গাড়ী লাফাইয়া পড়িতে আমার পা ভাঙ্গিয়া গিয়াছিল। শেষে কেলেহাঁড়ী মাথায় দিয়া সমস্ত রাত্রি একটা পুষ্করিণীতে গা ডুবাইয়া বসিয়া রহিলাম।” সপ্তম পরিচ্ছেদ ডমরুধর বলিলেন, — “তাহার পর লম্ফ দিয়া একেবারে আমি বরের চারি ঘোড়ার গাড়ীতে গিয়া উঠিলাম। ঘোর ত্ৰাসে সন্ন্যাসীর হৃৎকম্প হইল। আমার শরীর হইতে ফন্ট করিয়া সে সূক্ষ্মশরীর বাহির করিল। আপনার সূক্ষ্মশরীর লইয়া কোথায় যে সে পলায়ন করিল, তাহা বলিতে পারি না। সেই দিন হইতে তাহাকে অথবা তাহার চেলা দুইজনকে আর কখন আমি দেখিতে পাই নাই। আমি দেখিলাম যে, গাড়ীর উপর আমার দেহটি পড়িয়া রহিয়াছে। বাঘছাল হইতে বাহির ডমরু-চরিত দুনিয়ার পাঠক এক হও! ~ www.amarboi.com ~ ԳֆՖ