দাদা, আজ ব্যথাটা টের পাচ্ছি না, না ? একেবারে না। আটদিন তোদের কি কষ্টই না দিলুম-এখন বিদেয় কর দিদি । করব কার কাছে ? আচ্ছা দাদা, এই ষোল-সতের দিনের মধ্যে বেী একখানা চিঠি পৰ্য্যন্ত দিলে না ? বা, দিয়েচেন বই কি। পৌছান-সংবাদ দিয়েছিলেন, কালও একখানা পেয়েছি।-বরং আমিই জবাব দিতে পারিনি ভাই । বিমলা মুখ ভার করিয়া নিঃশব্দে চাহিয়া রহিল। নরেন্দ্ৰ লজ্জায় কুষ্ঠিত হইয়া বলিতে লাগিল, সেখানে গিয়ে পৰ্য্যন্ত সে ভাল নেইসর্দি-কাসি,-পরশু একটু জ্বরের মত হয়েছিল, তবু তার ওপরেই চিঠি লিখেচেন । আজ তাই বুঝি সেখানে টাকা পাঠিয়ে দিলে ? নরেন্দ্ৰ অধিকতর লজিত হইয়া পড়িল । কহিল, কিছুই ত তার হাতে ছিল না-বাড়ির পাশেই একটা মেলা বসেচে,-লিখেচেন, সেটা শেষ হয়ে গেলেই ফিরতে পারবেন।--তোমাকে বুঝি চিঠিপত্র লিখতে পারেন নি ? পেরেচেন বই কি ? কাল আমিও একখানা চারপাতা-জোড়া চিঠি পেয়েচি পেয়েচিস? পাবি বই কি-তার জবাবটাতোমার ভয় নেই দাদ।--তোমার অসুখের কথা লিখবো না। আমার নষ্ট করবার মত অত সময় নেই। বলিয়া বিমল। ঘর ছাড়িয়া চলিয়; গেল । সন্ধ্যার প্রাক্কালে খোলা জানালার ভিতর দিয়া লাল আকাশের পানে চাহিয়া নরেন্দ্র স্তব্ধভাবে বসিয়া ছিল, বিমলা ঘরে ঢুকিয়া বলিল, চুপ করে কি ভাবচ দাদা ? নরেন্দ্ৰ মুখ ফিরাইয়া বলিল, কিছুই ভাবি নে বোন, মনে মনে তোকে আশীৰ্বাদ করছিলুম, যেন এমনি সুখেই তোর চিরদিন কাটে। S9
পাতা:দর্পচূর্ণ - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/১৬
অবয়ব