পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সেইদিক থেকে দেখলে দঃখ জীবনের বড় সম্পদ ; দৈন্য বড় সম্পদ ; শোক, দারিদ্র্য, ব্যৰ্থতা বড় সম্পদ, মহৎ সম্পদ। যে জীবন শধ ধনে মানে সার্থকতায়, সাফল্যে, সখে-সম্পদে ভরা, শধই যেখানে না চাইতে পাওয়া, শধৰ্মই চারিধারে প্রাচায্যের, বিলাসের মেলা—যে জীবন আশ্রকে জানে না, অপমানকে জানে না, আশাহত ব্যর্থতাকে জানে না, যে জীবনে শেষ-রাত্রের জ্যোৎস্নায় বহদিন-হারা মেয়ের মািখ ভাববার সৌভাগ্য নেই, শিশপত্ৰ দধি খেতে চাইলে পিটলি গোলা খাইয়ে প্রবণনা করতে হয়নি, সে জীবন মরভূমি। সে সখিসম্পদ-ধনসম্পদ-ভরা ভয়ানক জীবনকে আমরা যেন ভয় করতে শিখি। এক-এক সময় মনটা এমন একটা সত্তরে নেমে আসে, যখন জীবনের আসল দিকটা বড় চোখে পড়ে যায় ; আজ অনেকদিন পরে একটা সেই ধরনের শভেদিন। কলকাতার শহরে এ দিন আসে না। আজ একটি সমরণীয় দিন, এই হিসাবে যে আমার বইখানার আজ শেষ ফলমাটি ছাপা হোল। আজ মাসখানেক ধরে বইখানা নিয়ে যে অক্লান্ত পরিশ্রম করেচি-কত ভাবনা, কত রাতিজাগা, সংশোধনের ও পরিবত্তনের ও প্রাফ দেখার যে ব্যগ্র আগ্ৰহ, সবারই আজ পরিসমাপ্তি। এইমাত্র প্রবাসী অফিসে বসে শেষ প্যারাটার প্রফে দেখে দিয়ে এলাম। ঠিক দামাস লাগলো ছাপতে। ঘনবর্ষার দিনটি আজ। আকাশ মেঘাচ্ছন্ন। দরে চেয়ে কত কথা মনে পড়ে। কিন্তু সে-সব কথা এখানে আর তুলবো না। শধই মনে হয়। সেই ভাগলপরে নিমগাছের দিকের ঘরটাতে বসে বনাতমোড়া সেই টেবিলটাতে সেই সব লেখা-সেই কাত্তিক, সাবের সেন্টশনে গাছের তলায় শীতকালে পাতা-জবালিয়ে আগােন-পোহানো, গঙ্গার ধারের বাড়িটার ছাদে কত সন্তব্ধ অন্ধকার রজনীর চিন্তা-শ্রম, সেই কাশীবনে ঘোড়া ছটিয়ে যেতে যেতে সে-সব ছবি -- সবারই আজ পরিসমাপ্তি ঘটল। উঃ, গত ছ'মাস কি খাটনিটাই গিয়েচে ! জীবনে কখনও বোধ হয়। আমি এরকম পরিশ্রম করিনি—কখনও না। ভোর ছটা থেকে এক কলমে এক টেবিলে বেলা পাঁচটা পৰ্যন্ত কাটিয়েচি। মাথা ঘরে উঠেচে, তখন একটা ট্রামে হয়তো বেড়াতে বেরিয়োঁচ, ইডেন গাডেনে কেয়াঝোপে বসে ও একদিন বোটানিক্যাল গাডেনে লালফােল-ফোটা ঝিলটার ধারে বসে কত সংশোধনের ভাবনাই ভেবেচি। তার ওপর কাল গিয়েচে সকলের চেয়ে খাটনি। সকাল ছটা থেকে সন্ধ্যা ছটা পৰ্যন্ত বইএর শেষ ফক্ষমার প্রািফ ও কাটাকুটি, শেষে রাত্রে পাথরেঘাটার বাড়িতে নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে যাওয়া ও তদারক করে লোক খাইয়ে বেড়ানো। কাল রাত্রে ভাল ঘািম হযনি, গা-হাত-পা যেন কামড়াচ্ছে। যাক। বই বেরবে বিধবারে। ভগবান বলতে পারবেন না যে ফাঁকি দিয়েচি ; তা যে দিইনি, তিনি অন্ততঃ সেটা জানেন। লোকের ভাল লাগবে। কিনা জানি না, আমার কাজ আমি করেচি। (ওপরের সব কথাগালো লিখলাম। আমার পরনো কলামটা দিয়ে,-যেটা দিয়ে বইখানার শহর হতে লেখা। শেষদিকটাতে পাকার ফাউন্টেন পেন কিনে নতুনের মোহে একে অনাদর করেছিলাম, ওর অভিমান আজ আর থাকতে iालभ मा।) আজ বই বেরল। এতদিনের সমস্ত পরিশ্রম আজ তাদের সাফল্যকে লাভ