পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৪৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বললে। একদিকে ঘন সবজি কাঁচা কষাড়ের বন, নীচ, পাড়, জলের খানিকট পয্যন্ত দাম-ঘাসে বোঝাই, কলমী শাক অজস্র, আর কলমীর দামে জলপিপি ও পানকোড়ী বসে আছে। মাথার ওপরকার আকাশটা বেয়ে সবাইপরের মাঠটার দিক থেকে খাব বড় এক ঝাঁক শাম কুট পাখী বাসায় ফিরচে, বোধ হয় জটেমারির বিল থেকে ফিরলো, পাঁচপোতার বাঁওড়ে যাবে। সেইখানটাতে আবার নিলে মাঝি কাস্তে হাতে ঘাস কাটতে নামলো—কি অপরােপ শোভা, সামনে খাবােরাপোতার ঘাটটা—একটা শিমল গাছের পিছনে আকাশে পাটকিলে রঙের মেঘদ্বীপ, চারিধারে এক অপােব শ্যামলতা, কি শ্ৰী, কি শান্তি, কি স্নিগ্ধতা, কি অপব্ব আনন্দেই মন ভরিয়ে তোলে-নলে কাস্তে হাতে ঘাস কাটচে-কাঁচা কষাড়ের মিন্ট, সরস জোলো গন্ধ বার হচ্চে, আমি শািন্ধ হেলান দিয়ে বসে দরের আকাশটা ও গাছপালার দিকে চেয়ে আছি। জীবনটাকে উপভোগ করতে জানতে হয়। মাত্র আট আনা খরচ হল—তাই কি ? তার বদলে আজ বৈকালে যে অপব্ব সম্পদ পেলাম, তার দাম দেয় কে ? আমাদের "গ্রামের কেউ আসতো পয়সা খরচ করে খামোেকা নৌকায় বেড়াতে ? কেউ গ্রাহ্য করে এই অপরােপ বনশোভা, এই অস্তদিগন্তের ইন্দ্রজাল, এই পাখীর দল, এই মোহিনী সন্ধ্যা ?...কেউ না। এই যে সৌন্দয্যে দিশেহারা হয়ে পড়চি, মগধ, বিস্মিত রোমাঞ্চিত হয়ে উঠাঁচ-এই সৌন্দয্যের মধ্যে ডাবে থেকেও এরা কেউ চোখ খালে চায় ?...আমি এসব করি বলে হয়তো আমাকে পাগল ভাবে।. যে জাতির মধ্যে সৌন্দয্য-বোধ দিন দিন এত কমে যাচ্চে, সে জাতির ভবিষ্যৎ সম্পবন্ধে খাব সন্দেহ হয়। শহর-বাজারের কথা বাদ দিলাম, এই সব পাড়াগাঁয়ে যেখানে আসল জাতিটা বাস করে, সেখানকার এই কুশ্রী জীবনযাত্রার প্রণালী, দন্টির এই সংকীর্ণতা, এই শিলাপবোধের অভাব মনকে বড় পীড়া দেয়। এবার জ্যোৎসনা উঠলো-আজ শক্লিা একাদশী, নলবন বাতাসে দলচে, জ্যোৎস্না পড়ে দােপাশের নদীজল চিক-চিক করচে। ঘাসের অটি বেধে নিয়ে নলে মাঝি নৌকা ছেড়ে দিল। এত পাখী, গাছপালা, নীল আকাশ, এই অপব্ব সৌন্দয্য এ সব যেন আমারই জন্যে সম্পট হয়েচে। এদেশেই তো এসব ছিল এতদিন, কেউ তো দেখে নি, কেউ তো ভোগ করে নি—কতকাল পরে আমি এদের বাবলাম, এদের থেকে গভীর আনন্দ পেলাম, এদের রসধারা পান করে তৃপ্ত হলাম।-- এই জ্যোৎস্না, এই আকাশ, এই অপব্ব ইছামতী নদী আমারই জন্য তৈরী হয়েচে! অনেক দিন পরে আমাদের ঘাটে দাপরে স্নান করতে গিয়েছিলাম। সন্নান সেরে এই রৌদ্রদীপ্ত নদী, দারের ঘাঘৰ-ডাকা বনানী, উষ্ণমন্ডলের এই অপব্ব বন-সম্পদ, স্বচ্ছ জলের মধ্যে সন্তরণশীল মৎস্যরাজি, নিশ্চেমঘ নীল আকাশ-— আমার শিরায় শিরায় কেমন একপ্রকার মাদকতার সন্টি করল। একটি ছেলের ছবি মনে এল-সে এমনি Tropics-এর শ্যামল সৌন্দয্য, রৌদ্রকরোক্তজবলা পথৰী, নীল দিকচক্রবালের উদার প্রখরতার মধ্যে এই জলধারা পান করে, দিনরাত গায়ক পাখীদের কাকলী শনে শৈশবে মানষ হয়েছিল-গ্রিামের কত দুঃখ-দারিদ্র্য, কত বেদনা, কত আনন্দ, কত আশা, কত ব্যৰ্থতার মধ্যে দিয়ে। সে মানষি হয়ে উঠে এদের গান গেয়ে গেল-এই গাছপালা, লতা, পাখী, ফলাফল, সােয্য --এদের-এরাই তাকে কবি করেছিল। বৈকালে হাট থেকে এসে বইখানা নিয়ে নিজের ভিটেতে গিয়ে খানিকটা পড়ে RS