পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্রায়ই বিকেলবেলা আমায় নিয়ে তাঁর বেড়াতে যাওয়া চাই-ই। কোনোদিন কলেজের দিকে, কোনোদিন নদীর দিকে। বরিশাল শহরে আমি নতুন গিয়েচিআমাকে জায়গা দেখিয়ে নিয়ে বেড়াতেন। তিনি। আর মাখে মখে চলত শেকসপিয়ারের শ্রাদ্ধ। শিকসপিয়ার ভুলে ভরা, পাতায় পাতায় ভুল। এতদিন সমালোচকদের চোখে ধলো দিয়ে লোকটা মহাকবি সেজে বেড়াচ্ছিল, কিন্তু আর চলবে না। শেকসপিয়ারে জারিজরি সব বেরিয়ে গিয়েচো! মিথ্যে ক-দিন টোঁকে ? আমার খব ভালো লাগতো এই সদানন্দ বন্ধের সঙ্গ। শেকসপিয়ারের ভ্ৰমপ্ৰমাদ সম্পবন্ধে তাঁর অত ব্যাখ্যাসহ বক্তৃতা সত্ত্বেও আমি মনে মনে বিশ্ববাস করতুম না, তাঁর কথা। কলেজ থেকে সবে বেরিয়েচি, বড় বড় শেকসপিয়ারী সমালোচকদের নাম শনে এসোচি সদ্য, তাঁদের অনেকের কান্ড দেখে এসেচি কলেজের লাইব্রেরিতে। তাঁদের বিরদ্ধে বরিশালে কীৰ্ত্তনখোলা নদীর ধারে উড়ানি গায়ে দেওয়া বন্ধের মতবাদ আমার কাছে প্ৰলাপ ছাড়া আর কিছ মনে হয়নি। তবও অবিশ্যি শ্রদ্ধার সঙ্গে শনেঃ যৌতুম। আর একজন লোককে এই বরিশালেই দেখেছিলাম। তাঁর নাম কুঞ্জবাব। গলির মোড়ে একটি বাড়ির বারান্দায় প্রতিদিন বিকালে কুঞ্জবাব বসে ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের ধম্পমামলক গলপ শোনাতেন। আমি একদিন শানেছিলাম। তিনি প্ৰহাদের গলপ শোনাচ্চেন ওদের। এমন সন্দের বলবার ক্ষমতা যে, রাস্তার লোক কুঞ্জবাবর গলপ শোনার জন্যে ভিড় করে দাঁড়িয়ে যেতো। সে গলপ শোনবার মতো জিনিস। যখনই আমি কুঞ্জবাবকে দেখতাম, সব সময়েই একদল ছেলেমেয়ে তাঁকে ঘিরে থাকতো। কুঞ্জবাবার সঙ্গে একদিন আলাপ হল অমনি এক রাস্তার ধারে। আমি তাঁকে বললাম-আপনার নাম আমি শনেচি, বড় ভালো লাগে আপনার গলপ। কুঞ্জবাব দেখলাম লডিজত হয়ে পড়লেন। আমার পরিচয় জিজ্ঞেস করতে আমি বললাম—কলকাতা থেকে আপিসের কাজে এসেচি, আবার দ-চারদিন পরে চলে যাবো।


এখানে আছেন কোথায় ? —কাউনিয়াতে আছি-এক বন্ধর বাড়িতেআমায় সঙ্গে করে তিনি একটি নীচু গোছের গোলপাতার ঘরে নিয়ে গেলেন। আমি ঠিক জানিনে সে ঘরটাতে তিনি সব সময় থাকতেন। কিংবা তাঁর আলাদা কোথাও বাসা ছিল। ঘরের মধ্যে বসিয়ে তিনি আমার প্রশেনর উত্তরে অনেক ভক্তিমািলক কথাবাত্তা কইলেন। আমায় একটা ছোট রেকাবি করে বাতাসা আর শশা কাটা খেতে দিয়ে বললেন-ঠাকুরের প্রসাদ, মাখে দিন একট। সরল-বিশবাসী ঈশ্ববর-ভক্ত লোক। তাঁর পান্ডিত্য ততটা ছিল না, যত ছিল ভগবানে বিশদ্বাস ও ভালোবাসা : যতদিন বরিশালে ছিলাম, মাঝে মাঝে তাঁর সেই ছোট ঘরটাতে গিয়ে তাঁর সঙ্গে কথাবাত্তা বলে বড় আনন্দ পেতাম ।

দঃখের বিষয় আমি বরিশাল থেকে চলে আসবার অলপ কয়েক মাস পরেই উপরোক্ত দাই ভদ্রলোকই পরলোকগমন করেন। কলকাতায় বসে। এ খবর আমি কার কাছ থেকে যেন শানেছিলাম। আমার যতদর মনে আছে, শেকসপিয়ারের সমালোচক ভদ্রলোকের নাম অমল্যবাব। এমন আত্মভোলা ধরনের পণ্ডিত লোক আমি জীবনে খাব বেশি দেখিনি। বরিশাল থেকে খালপথে উজীরপর বলে একটা গ্রামে আমার এক সহপাঠীর বাড়ি গেলাম বেড়াতে। একটা খালের মধ্য দিয়ে গিয়ে আর একটা খালে পড়লাম, সেখানে R