পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪৩৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কাল সকালে শিলংয়ের ওয়াড লেকে বেড়াতে গেলাম, চারিধারে পাইনবনের সারি, দরে লাবান হিলের চড়া, লেকের ধারে শিশির-সিক্ত নানা গাছপালা-বেশ ভাল লাগল শিলং শহরটিকে। কিন্তু সময় নেই, তাড়াতাড়ি করে নিতে হবে। সাড়ে আটটাতে সপ্রভাদের গাড়ি আসবে, কাজেই রেণার চিঠিখানা ডাকে ফেলে দিয়েই হোটেলে এসে সনানাহার করে নিয়ে তৈরী হয়ে বসে রইলাম। খানিক পরে সপ্রভার ভাই শান্তি এসে বললে—এ কি! আপনি রয়েছেন যে! আমি তো অবাক, রয়োচেন মানে কি! গাড়ি কোথায় ? শান্তি বল্লে-গাড়ি তো আপনার এখানে এসেছিল, আপনাকে না পেয়ে চলে গেল ! - শািনলাম হোটেলের ম্যানেজার ভুল করে বলে দিয়েচে যে, আমি ট্যাক্সি আসার দেরি দেখে বাসে সিলেট রওনা হয়েচি। কাজেই ওরা চলে গিয়েচে । কি বিশ্ৰী ব্যাপার! রাগে দঃখে তো আমার চোখে জল এল। আমি হাঁ করে বসে আছি সকাল থেকে সেজেগজে গাড়ির জন্যে—আর হোটেলের ম্যানেজারটা না। জেনেশনে বলে দিলে আমি সিলেট চলে গিয়েচি ?... তখনি একটা ট্যাক্সি ভাড়া করে প্রথম টোল গেটে রওনা হলাম। --মাত্র ৩২ মিনিট সময় হাতে আছে, এই ৩২ মিনিটের মধ্যে ১৪ মাইল গিয়ে নঙ মালকি গেটে ওদের গাড়ি ধরিয়ে দিতে হবে। গাড়ি হুটল। তীরবেগে--Upper Shillongএর রাসােতা দিয়ে। মোড়ের মাথায় আমি থামতে দিইনে। ড্রাইভার বলে গাড়ি উলেট যাবে বাব। বাঁকের মাখে দশ মাইলের বেশী চালাবার উপায় নাই, তাতে খালি গাড়ি। এলিফ্যাশটা ফলস-এর কাছে যখন এলাম, তখন ড্রাইভার বল্লে, ভরসা করছি বােব, ধরিয়ে দিতে পারব। চালাও চালাও, আরও জোর দাও । ত্ৰিশ কেন, চল্লিশ করো না! আর কতটা ? শধই-উচ-নীচ, বাঁকা আর বাঁকা, খাদের মত রাস্তা চলেছে পাহাড়ের গায়ে। জোর দেয় বা কি করে ? নঙ মালকি গেট দীর থেকে দেখা গেল। দাখানা বাস আর একখানা। ট্যাক্সি দাঁড়িয়ে রয়েচে । আমরা পৌছতে না পৌছতেই ট্যাক্সিখানা ছেড়ে ঠিক সিলেটের পথে গিয়ে উঠল বাঁদিকে। আমি ছটে গিয়ে ট্যাক্সি থামালাম, দেখি তাতে এক সাহেব। আর মেম। খবর নিয়ে জানলাম। আর একখানা সাদা ট্যাক্সিতে দটি বাঙালী মহিলা ও এক ভদ্রলোক কিছ আগে চলে গেলেন। কি আর করি, নিরাশ হয়ে ফিরলাম। শিলং পোস্টাফিসের কাছে দেখি কান্তি দাঁড়িয়ে পথে, তাকে গাড়িতে উঠিয়ে নিলাম। সে বল্লে—একটায় সিলেটের ডাক-ভ্যান ছাড়ে, তাতে লোকও নেয়। আমার মন বেজায় খারাপ, শিলং-এ থাকতে একটিও ইচ্ছে নেই, কান্তিকে সঙ্গে নিয়ে মেল-ভ্যানে টিকিট বািক করে এলাম। পথে সম্প্রভার সেই দাদা মোটরে যাচ্ছিলেন, আমায় দেখে বল্লেন--কি, আপনি যান নি ? এখানে যে 2 আমি সব বল্লাম। সপ্রভার বন্ধির নিন্দাও করলাম। তিনি বল্লেন—তার কোন দোষ নেই। আমিও ছিলাম। তখন, আপনার হোটেলে গিয়ে দশ মিনিট আমরা গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে। হোটেলের ম্যানেজার বল্লে---গাড়ি না। আসাতে আপনি মোটরবাসেই সিলেট চলে গিয়েচোন। পােটর মািখখানা অন্ধকার হয়ে গেল তাই শানে। সে খব দঃখিত হয়েচে মনে হোল। কি আর করব, যা হবার তা হয়েচে । এতদিন থেকে ঠিক করে আসচি যে "সিলেটের পথ দিয়ে সপ্রভার সঙ্গে যাব, তা উভয় পক্ষের সামান্য বদ্ধির দোষে भाग्नेव्ज ना ।