পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

-সে বলে বিয়ে করো। আমি সাহস পাইনে কিন্তু, কোথায় রাখবো, কি খেতে দেবো। এই তো সামান্য মাইনে। —তর বাপ-মা নেই ? -কেউ নেই, আমারই মতো অবস্থা। ডাকপিয়াদা আসলে বড় প্রেমিক, যেমন তার প্রণয়িনীর কথা উঠলো, সে আর. অন্য কথা বলে না প্ৰণয়িনীর কথা ছাড়া। মেয়েটি নাকি বড় ভালো, তাকে খব ভালোবাসে, চুরাটের কারখানায় কাজ করে যা পায়, নিজের খাওয়া পরা বাদে সব জমিয়ে রাখে। ওদের ভবিষ্যৎ সংসারের জন্যে, একটি পয়সা বাজে খরচ করে না। অত বড় বনের মধ্যে কিন্তু রাত্রে কোনো রকম শব্দ শািনলাম না বন্যজন্তুদের } একটি শেয়াল পয্যন্ত ডাকলো না। খানিক রাত্রে দজনেই ঘামিয়ে পড়লাম। সকালে এদিকের ডাকপিয়াদা এল। ঠিক করাই ছিল যে আমি তার সঙ্গে মোংকেট পয্যন্ত উনিশ মাইল পথ হেটে যাবো। কিন্তু আমার সঙ্গী ডাকপিয়াদা কথায় কথায় রাত্রেই আমায় বলেছিল যে, পাহাড় জাতগলের পথ এখানে শেষ হয়ে গেল, এরপর আর বেশি জঙ্গল নেই, কেবল পড়বে রবারের বাগান আর ধানক্ষেত। আবার জঙ্গল আছে মান্দালে ছাড়িয়ে গোয়েটেক) সেতু পার হয়ে উত্তর-পশিব ব্ৰহ্মসীমান্তে। সেদিকের বন অত্যন্ত নিবিড়, সে পথ অনেক বেশি দগম। আমি ডাকপিয়াদাকে বললাম, এই নতুন লোকটিকে জিজ্ঞেস করো তো কতদার আর জঙ্গল পড়বে ; ততদার ওর সঙ্গে যাবো।-- নবাগত ডাকপিয়াদা খাস বমিজ ছাড়া অন্য কোনো ভাষা জানে না, তার সঙ্গে কথা বলা সম্পভব নয়। আমার। আমার পািকব সাথী বললে--"বাব, ও বলছে সাত মাইল পয্যন্ত এই রকম জঙ্গল আর পাহাড়, তারপরে আবার বন্দমা রবার কোম্পানির বড় একটা বাগান পড়বে দাতিন মাইল, তারপরে ধানের ক্ষেত আর বসিত। এই সাত মাইল আমি ওর সঙ্গে গেলাম। প্রভাতের সােয্যালোক বনের ডালে ডালে বাঁকা ভাবে পড়েছে, কারণ পাহাড়ের পািব্ব দিকের অংশটা খাব নীচ। অনেক রকমের বন্যপলেপির মধ্যে সাদা সাদা কি এক ধরনের ফলে ছোট-বড় সব গাছের মাথা ছেয়ে রেখেচে ; কোনো লতার ফল হবে, কিন্তু লতা আমার চোখে পড়লো না। খাব ঘন সগিন্ধ সে ফলের, যে যে গাছের মাথায় সে। ফলের মেলা, তার তলা দিয়ে যাবার সময় উগ্ৰ সবাসে মাথার মধ্যে যেন বিমা ঝিম করে, আমি ইচ্ছে করে খানিকটা দাঁড়িয়ে থেকে দেখোঁচি, মনে হয় যেন শরীর টলচে । একটি জায়গায় সৌন্দয্যের ছবি মনে গভীর দাগ কেটে রেখে গিয়েচে । পথের ধারে একটি পাহাড়ী নদী, মাথার ওপর সেখানে আকাশ দেখা যায় না, বড় বড় বনস্পতিদের শাখাপ্রশাখার মেলা, মোটা লতা ঝলে জলের ওপর পয্যন্ত পৌছেচে, বাঁদিকের বন এত ঘন যে কালো-মন্ত দেখাচ্চে, ডানদিকে জলের ওপরে শিলাখন্ডের অগ্রভাগ জেগে আছে। রাসােতাটা ওপার থেকে এসেচে টেরচা ভাবে, বনের মধ্যে ঘরে ফিরে নদীর ধারে এসে যেন হঠাৎ খানিকটা ঢাল হয়ে নেমে নদীগভে ঢাকেচে। সেই দিকটা এপার থেকে দেখাচ্চে যেন চীনা চিত্রকারের হাতে অাঁকা ছবির মতো। একটা শিলাখন্ডেব ওপর বসে সেই দশ্য কতক্ষণ উপভোগ করলাম একমনে, আমার সঙ্গী ডাকপিয়াদা gOD OY DDO YL DS O