পাতা:দিবারাত্রির কাব্য - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দিবরাত্রির কাব্য RR বেশী উজ্জ্বল দেখায়। এখন, এই গরমে এতক্ষণ কাঠের উনানে রান্না করার ফলে তার সমস্ত মুখ মলিন নিরুজ্জ্বল হয়ে গেছে । হেরম্ব আর একবার স্নান করবে। কিনা জিজ্ঞাসা করতে এলে তার মুখের দিকে তাকিয়ে হেরম্ব ব্যথিত হল । একধার থেকে কেবল রান্না করে যাওয়ার পাগলামী মেয়েদের কেন আসে হেরম্বের তা অজানা নয় । আরও অনেককেই সে এ নেশায় মেতে থাকতে দেখেছে। সুপ্রিয়ার মত তাদেরও এমনি রান্নার বোক চাপে, রোধে রোধে আধমরা হয়ে তারা খুসী হয় । অথচ তাদের সঙ্গে, যারা ভাববার উপযুক্ত মন থেকে বঞ্চিত, সুপ্রিয়ার একটা অতিবড় মৌলিক পার্থক্য আছে। ওর এত রান্না করাকে হেরম্ব কোনমতেই সমর্থন করতে পারল না । বারান্দায় দাড়ালে বাড়ীর প্রাচীর ডিঙ্গিয়ে বহুদূর অবধি প্ৰান্তর চোখে পড়ে। মাঠ থেকে এখন আগুনের হালকা উঠছে। খানিক তাকিয়ে থাকলে চোখে ধাধা লেগে যায় । হেরম্ব বলল, “বার বার স্নান করিয়ে আমাকে ঠাণ্ডা করতে চাস, তুই যে গরমে গলে গেলি নিজে ?” সুপ্রিয়া এখনো হাসল, ‘গলে গেলাম ? ননীর পুতুল নাকি !” হেরম্ব গম্ভীর হয়ে বলল, ‘হাসিস নে। তুই কি বলবি জানি, তবু তোকে বলে রাখি, শরীর ভাল রাখার চেয়ে বড় কাজ মানুষের নেই । শরীর ভাল না থাকলে মানুষ ভাবুক হয়, দুঃখ বেদনা কল্পনা করে, ভাবে জীবনটা শুধু ফাকি । বদহজম আর ভালবাসার লক্ষণগুলি যে একরকম তা বোধ হয় তুই জানিস নে ?--”