পাতা:দিল্লী চলো - সুভাষচন্দ্র বসু.pdf/১০৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

যে যুদ্ধশেষে বৃটিশরা দানস্বরূপ আমাদের স্বাধীনতা দেবে। আমার মনে হয়, এ ধরণের কোন সম্ভাবনাই নেই—আত্মসম্মান জ্ঞানসম্পন্ন কোন ভারতবাসীই একথা আজ আর বিশ্বাস করে না।

 দ্বিতীয় পথ হচ্ছে “অপেক্ষা করা এবং দেখা”র নীতি। এ পথেও মনে বিশ্বাস রাখতে হবে যে, ভবিষ্যতে বৃটিশের অবস্থা এত বেশী সঙ্কটজনক হয়ে উঠবে যে তারা যুদ্ধ পরিস্থিতির দরুণ আমাদের স্বাধীনতার দাবী পূরণ করতে বাধ্য হবে। এই পথে যাঁরা বিশ্বাসী, তাঁদের মতানুসারে সময় পূর্ণ হলে স্বাধীনতা পাকা ফলের মতো আমাদের কোলে এসে পড়বে—তার জন্যে ধৈর্য্য ধরে অপেক্ষা করা ছাড়া আমাদের বিশেষ কিছু করার নেই। আমার মতে এপথও বর্জ্জনীয়। আমি বহুবার আমার দেশবাসীদের বলেছি, যা-ই ঘটুক না কেন, বৃটিশরা শেষ পর্য্যন্ত ভারতকে আঁকড়ে থাকবে এই সিদ্ধান্ত তারা পাকাপাকি করে রেখেছে। অন্যত্র তাদের অবস্থা যত খারাপ হবে, ভারতকে ততই তারা জোরে আঁকড়ে ধরবে এই জন্য যে ভারতের সাম্রাজ্য যদি কোনমতে বাঁচাতে পারে তবেই বৃটিশ-সাম্রাজ্য বাঁচবে।

 তৃতীয় পথ হচ্ছে সত্যাগ্রহ বা আইন-অমান্যের পথে। ১৯২১ থেকে ভারতের জাতীয় কংগ্রেস এই পথ অনুসরণ করে আসছে। এপথে আমাদের স্বাধীনতা আসবে কি? আমার সুস্পষ্ট অভিমত হচ্ছে, আসবে না। গত কুড়ি বৎসরের ইতিহাস আমাদের এই শিক্ষাই দেয়। আমি জানি, ১৯২১ অব্দে কংগ্রেসের অনেকেই বিশ্বাস করতেন, সত্যাগ্রহ কিংবা আইন-অমান্যের পথেই আমাদের স্বরাজ আসবে। দুটি কারণের উপর ভিত্তি করে এই বিশ্বাস গড়ে উঠেছিল; পরে এ দুটি মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। প্রথমতঃ ধরে নেওয়া হয়েছিল যে, বৃটিশ গবর্নমেণ্টের হৃদয়ের পরিবর্তন সম্ভব। দ্বিতীয়তঃ ধরে নেওয়া হয়েছিল যে, সত্যাগ্রহের চাপে পড়ে বৃটিশরা নিজেদের ভুল দেখতে পাবে—বুঝবে যে, শক্তির দ্বারা

৯৫