পাতা:দিল্লী চলো - সুভাষচন্দ্র বসু.pdf/১২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

জন্যে সম্ভাব্য সব পথই অবলম্বন করবে—এ আমি জানি; এর জন্য আমি বিস্মিত নই। যা আমাকে বিস্মিত করে ও ব্যথা দেয় তা হচ্ছে, বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদীরা যে জঘণ্য কাজ করতে পারে, সে কাজ করার জন্যে বৃটিশ বেতনভোগী আমার কোন কোন দেশবাসী স্বেচ্ছায় এগিয়ে আসে। মাসে কয়েকটি মুদ্রার জন্যে আমার দেশবাসী নিজেদের এমন ঘৃণ্যভাবে বিকিয়ে দেবে কেন? গত যুদ্ধে ইংরেজরা যে প্রচার-প্রদ্ধতি অবলম্বন করেছিল, তার ইতিহাস ইংরেজরাই কাগজে কলমে লিখে রেখে গেছে। বৃটিশ প্রচারকরা কি করতে পারে না পারে, তার ইতিহাস জানতে হলে পমসেনবি-র লেখা “Secrets of Crewe House” এবং “Wortime Falsehoods”-এর মতো বই পড়লেই যথেষ্ট। ইংরেজ সেনাপতি—ব্রিগেডিয়ার চার্টেরিসই গত যুদ্ধে এই গুজব রটিয়েছিলেন, জার্ম্মানরা মৃত সৈন্যদের দেহ থেকে চর্ব্বি বের করে নিচ্ছে। তিনি জানতেন, এটা ডাহা মিথ্যা। যুদ্ধের শেষে তিনি স্বীকারও করেছিলেন যে, তার এই প্রচার লোকের মনে এমন দৃঢ়মূল হবে এ তিনি প্রত্যাশা করেন নি। কিন্তু বিশ্বের জনসাধারণের সহজ-বিশ্বাসী একটা অংশ মনে করেছিল, একজন বৃটিশ সেনাপতি মিথ্যা কথা বলতেই পারে না। তাই এ অপকৌশলে কাজ হয়েছিল। তারপর বহু পরিবর্ত্তন হয়ে গেছে। জনসাধারণ আজ আর অত সহজ-বিশ্বাসী নয়। বেতারের দৌলতে উভয় পক্ষের প্রচারই পৃথিবীর সকল জায়গায় পৌঁছুতে পারে। তা সত্ত্বেও চিতাবাঘ তার গায়ের দাগ বদলাতে পারে না। মিথ্যাবাদী যদি জানেও যে তার কথায় কেউ বিশ্বাস করে না, তবু সে মিথ্যা কথা বলা বন্ধ করতে পারে না। আশা না থাকলেও সে আশা করে যে, দুনিয়ায় এমন অনেক বোকা আছে, যাদের উপর মিথ্যাচারের ফল ফলবে। বিরুদ্ধ পক্ষ তাই এত মিথ্যা ও ধাপ্পাবাজির জাল ফেলে চলেছে। এতে আমি বিস্মিত নই। কিন্তু অনুতাপের বিষয় এই যে,

১১৩

 দিল্লী—৮