পাতা:দিল্লী চলো - সুভাষচন্দ্র বসু.pdf/২৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

ভারতের স্বাধীনতালাভের উদ্দেশ্যে অস্ত্র ধারণ করতে আহ্বান করছি। বৃটিশের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত সংগ্রাম আরম্ভ করার জন্য আমরা তাঁদের এবং তাঁদের মিত্রদের আহ্বান জানাচ্ছি। যতদিন ভারতভূমি থেকে তারা বহিষ্কৃত না হয় এবং যতদিন ভারতবাসী আবার স্বাধীন না হয়, ততদিন সাহস, অধ্যবসায় এবং চরম বিজয়ে আস্থা রেখে সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে।

 ১৭৫৭ অব্দে বাংলা দেশে বৃটিশের হাতে প্রথম পরাজয়ের পর থেকেই ভারতীয় জনসাধারণ এক বছর অবিশ্রান্তভাবে প্রচণ্ড সংগ্রাম চালিয়েছে। এই সময়ের ইতিহাস অসংখ্য অতুলনীয় বীরত্ব এবং আত্মত্যাগের আদর্শে পরিপূর্ণ। ইতিহাসের পৃষ্ঠায় সিরাজদ্দৌলা, মোহনলাল, হায়দার আলী, টিপু সুলতান, দক্ষিণ ভারতের ভেলু তাম্পি, আপ্পা সাহেব ভোঁসলা, মহারাষ্ট্রের পেশোয়া বাজিরাও, অযোধ্যার বেগম, পাঞ্জাবের সর্দ্দার শ্যাম সিং আতিরিওয়ালা, ঝাঁসীর রাণী লক্ষ্মীবাঈ, তাঁতিয়া টোপি, দামরাওনের মহারাজ কুনওয়ার সিং, নানা সাহেব এবং আরও বহু বীরের নাম স্বর্ণাক্ষরে লিখিত আছে। আমাদের দুর্ভাগ্য, আমাদের পূর্ব্বপুরুষরা বুঝতে পারেন নি, বৃটিশ সমগ্র ভারত গ্রাস করতে উদ্যত। কাজেই তাঁরা সম্মিলিতভাবে তাদের বিরুদ্ধে দাঁড়াননি। পরিশেষে ভারতীয় জনগণ যখন অবস্থার গুরুত্ব বুঝতে পারল তখন তারা একত্রিত হল। ১৮৫৭ অব্দে বাহাদুর শাহের অধীনে তারা স্বাধীন জাতি হিসাবে শেষ সংগ্রাম করল। যুদ্ধের প্রথম দিকে কয়েকবায় জয়লাভ সত্ত্বেও মন্দভাগ্য এবং ভ্রান্ত নেতৃত্ব ধীরে ধীরে তাদের এনে দিল চরম পরাজয় ও পরাধীনতা। তবু ঝাঁসীর রাণী, তাঁতিয়া টোপি, কুনওয়ার সিং এবং নানা সাহেব জাতীয় আকাশে চিরন্তন নক্ষত্রের মত জ্যোতিষ্মান হয়ে আমাদের আত্মত্যাগ এবং সাহসিকতার প্রেরণা দিচ্ছেন।

 ১৮৫৭ অব্দের পর বৃটিশরা ভারতীয়দের নিরস্ত্র করে দেয় এবং আতঙ্ক

২১