পাতা:দিল্লী চলো - সুভাষচন্দ্র বসু.pdf/৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

ভারতীয়ের মনই এইরূপ অফুরন্ত আশাবাদিতায় ভরা। বিপক্ষ দলের এই দৃঢ় প্রতিরোধ যে আমাদের টলাতে পারে নি— তার আরও একটা কারণ আছে। তারা যদি মণিপুর, পূর্ব্ববঙ্গ এবং আসাম হারায়, তবে ব্রহ্মপুত্র নদে পৌছানোর পূর্ব্ব পর্য্যন্ত তাদের পক্ষে আর বাধা দান সম্ভব হবে না। নদের অপর পারে গিয়ে তবেই তারা বাধা দান করতে পারবে। কাজেই, সামরিক গুরুত্ব বিবেচনা করেই তারা কথিত অঞ্চলে সর্ব্ব শক্তিবিনিয়োগ করবে। এই জন্যেই তাদের পক্ষে যতটা সম্ভব দৃঢ় প্রতিরোধ দেওয়া খুবই স্বাভাবিক।

 সংক্ষেপে বলতে গেলে, আমাদের বলিষ্ঠ আশাবাদিতা তিনটি কারণের ফল; প্রথমতঃ গত এক বছরে আমরা অসামান্য ফললাভ করেছি; দ্বিতীয়ত, আমরা ভারত-সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতীয় মাটির উপর বিপক্ষসেনাদের পরাজিত করতে পেরেছি, এবং তৃতীয়তঃ, বর্ত্তমান রণাঙ্গণের বিরাট সামরিক গুরুত্ব আমরা উপলব্ধি করেছি। এর ফলে আমরা অনুভব করছি, এ অঞ্চল অধিকার করার জন্য আমাদের সুকঠিন সংগ্রাম করতে হবে।

 বিশ্বপরিস্থিতি এবং ভারতের আভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি পর্য্যবেক্ষণ করলে তবে এই আশাবাদী মনোভাব আরও দৃঢ়তর হয়ে ওঠে। বিশ্বপরিস্থিতি বিচার করলে দেখা যাবে, বিপক্ষীয়েরা পৃথিবীর বিভিন্ন রণাঙ্গণে পূর্ণরূপে কর্ম্মব্যস্ত। ইউরোপে দ্বিতীয় রণাঙ্গণের আরম্ভও পরোক্ষভাবে আমাদের সহায়ক—কেননা তার অর্থ, দীর্ঘ কালের জন্যে ইঙ্গ-মার্কিণ সমর শক্তি ইউরোপে সম্পূর্ণ কর্ম্মব্যস্ত থাকবে।

 আমরা ভারতীয়রা বিশ্বপরিস্থিতি বিচার করে দেখলে বুঝতে পারব, স্বাধীনতার লক্ষ্যে পৌঁছানোর পক্ষে এর চেয়ে অধিকতর অনুকূল ঘটনাসমাবেশ আর হতে পারে না—এখানে-ওখানে কোন রণাঙ্গণে অক্ষশক্তির বিপদ দেখা দিলেও, তাতে আমাদের কিছু এসে যায় না। আমাদের

৪০