মনোহরগিরি যেভাবে পূর্বোক্ত কথাগুলি বলিলেন, তাহাতে আমি আন্তরিক সন্তুষ্ট হইলাম না। তিনি মুখে কোন শত্রু নাই বলিলেও তাঁহার কথার ভাবে সেরূপ বুঝিতে পারিলাম না। আমার বোধ হইল, তিনি যেন আমার নিকট কোন কথা গোপন করিতেছেন। কিন্তু আমি সে কথা প্রকাশ করিতে সাহস করিলাম না। বরং ঈষৎ হাসিয়া বলিলাম, “যদি তাহাই হয়, তবে আর বেহারীগিরির জন্য এত চিন্তিত হইতেছেন কেন? যদি আপনাদের কোন শত্রু না থাকে, তাহা হইলে আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন—আপনার শিষ্য শীঘ্রই প্রত্যাগমন করিবেন।”
আমার উত্তরে মনোহরগিরি সন্তুষ্ট হইলেন না। তিনি দীর্ঘ নিশ্বাস ত্যাগ করিয়া বলিলেন, “আপনার অনুমান বাস্তবিকই সত্য। কিন্তু কি জান কেন আমার মনকে প্রবোধ দিতে পারিতেছি না। যতই আমি বেহারীর কথা ভাবিতেছি, ততই যেন আমার প্রাণ, কাঁদিয়া উঠিতেছে। কেন এমন হয়? আর কখন। ত এরূপ হয় নাই?
আমি হাসিয়া বলিলাম, “আপনি বেহারীগিরিকে বোধ হয় পুত্রাধিক স্নেহ করেন। সেই কারণেই আপনার মনে সদাই, তাঁহার প্রাণের আশঙ্কা হইতেছে। যিনি যাহাকে স্নেহ করেন, তাহাকে দেখিতে না পাইলে তাঁহার মনে স্বতঃই একটা কুচিন্তার উদয় হয়। আপনারও সেইরূপ হইয়াছে।”
মনোহরগিরি লজ্জিত হইয়া বলিলেন, “আপনার অনুমান যথার্থ। বেহারীকে আমি বড় ভালবাসি, আমার অবর্ত্তমানে তাহাকেই সেবায়েত করিব এই আমার অভিপ্রায়। হয়ত সেই কারনেই আমার এত চিত্তচাঞ্চল্য ঘটিয়াছে।”