বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:দুর্গেশনন্দিনী বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১১৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১০৮
দুর্গেশনন্দিনী

ভীমনাদে “আল্লা—ল্লা—হো” শব্দ করিয়া অগণিত পাঠানসেনা-স্রোত কমধ্যে প্রবেশ করিল। রাজপুত্ত্র দেখিলেন, যুদ্ধ করা কেবল মরণের কারণ।

 রাজপুত্রের অঙ্গ রুধিরে প্লাবিত হইতেছে; রুধিরোৎসর্গে দেহ ক্রমে ক্ষণ হইয়া আসিয়াছে। তিলােত্তমা এখনও বিচেতন হইয়া বিমলার ক্রোড়ে রহিয়াছেন। বিমলা তিলােত্তমাকে ক্রোড়ে করিয়া কাঁদিতেছেন। তাঁহারও বস্ত্র রাজপুত্রের রক্তে আর্দ্র হইয়াছে।

 কক্ষ পাঠান-সেনায় পরিপূর্ণ হইল।

 রাজপুত্র এবার অসির উপর ভর করিয়া নিঃশ্বাস ছাড়িলেন। একজন পাঠান কহিল,—“রে নফর! অস্ত্র ত্যাগ কর, তােরে প্রাণে মারিব না!” নির্বাণােন্মুখ অগ্নিতে যেন কেহ ঘৃতাহুতি দিল। অগ্নিশিখাবৎ লম্ফ দিয়া, কুমার দাম্ভিক পাঠানের মস্তকচ্ছেদ করি নিজ চরণতলে পাড়িলেন। অসি ঘুরাইয়া ডাকিয়া কহিলেন,—“যবন! রাজপুতেরা কি প্রকারে প্রাণত্যাগ করে, দেখ্।”

 অনন্তর বিদ্যুদ্বৎ কুমারের অসি চমকিতে লাগিল। রাজপুত্ত্র দেখিলেন যে, একাকী আর যুদ্ধ হইতে পারে না; কেবল যত পারেন, শত্রুনিপাত করিয়া প্রাণত্যাগ করাই তাঁহার উদ্দেশ্য হইল। এই অভিপ্রায়ে শত্রু-তরঙ্গের মধ্যস্থলে পড়িয়া বজ্রমুষ্টিতে দুই হস্তে অসিধারণপূর্ব্বক সঞ্চালন করিতে লাগিলেন। আর আত্মরক্ষার দিকে কিছুমাত্র মনােযােগ রহিল না; কেবল অজস্র আঘাত করিতে লাগিলেন। এক, দুই, তিন,—প্রতি আঘাতেই হয় কোন পাঠান ধরাশায়ী, নচেৎ কাহারও অঙ্গচ্ছেদ হইতে লাগিল। রাজপুত্ত্রের অঙ্গে চতুর্দ্দিক হইতে বৃষ্টিধারাবৎ অস্ত্রাঘাত হইতে লাগিল। আর হস্ত চলে না, ক্রমে ভূরি ভুরি আঘাতে শরীর