একবিংশতিতম পরিচ্ছেদ
সফলে নিষ্ফল স্বপ্ন।
পিতৃহীনা অনাথিনী, রুগ্ন-শয্যায়;—জগৎসিংহ তাহার শয্যাপার্শ্বে দিন যায়, রাত্রি যায়, আর বার দিন আসে; আর বার দিন যায়, রাত্রি আসে। রাজপুত-কুল-গৌরব তাহার ভগ্ন-পালঙ্কের পাশে বসিয়া শুশ্রূষা করিতেছেন; সেই দীনা, শব্দহীনা বিধবার অবিরল কার্য্যের সাহায্য করিতেছেন। আধিক্ষীনা দুঃখিনী তাঁহার পানে চাহে কি না—তাঁর শিশির-নিপীড়িত পদ্মমুখে পূর্ব্বকালের সে হাসি আসে কি না, তাহাই দৈখিবার আকাঙ্ক্ষায় তাহার মুখপানে চাহিয়া আছেন।
কোথায় শিবির? কোথায় সেনা? শিবির ভঙ্গ করিয়া সেনা পাটনায় চলিয়া গিয়াছে! কোথায় অনুচর সব? দারুকেশ্বর-তীরে প্রভুর আগমনপ্রতীক্ষা করিতেছে। কোথায় প্রভু? প্রবলতপ-বিশোযিত সুকুমার কুসুম-কলিকায় নয়ন-বারি সেচনে পুনরুৎফুল্ল করিতেছেন।
কুসুম-কলিকা ক্রমে পুনরুৎফুল্ল হইতে লাগিল। এ সংসারে প্রধান ঐন্দ্রজালিক স্নেহ! ব্যাধি-প্রতীকারে প্রধান ঔষধ প্রণয়। নহিলে, হৃদয়-ব্যাধি কে উপশম করিতে পারে?
যেমন নির্ব্বাণোম্মুখ দীপ বিন্দু বিন্দু তৈল-সঞ্চারে ধীরে ধীরে আবার আসিয়া উঠে, যেমন নিদাঘ-শুষ্ক বল্লরী আষাঢ়ের নববারি-সিঞ্চনে ধীরে